যুক্তরাষ্ট্র
গণতন্ত্র রক্ষায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম
উদারপন্থী রিপাবলিকানদের অন্দরমহলের গুঞ্জন পার্টির সীমানা ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত পার্টি নেতাদের কেউ কেউ এরইমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ট্রাম্প-বিরোধী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে শীর্ষস্থানীয় তিন গণমাধ্যম। ইকোনমিস্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট আর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল(ডব্লিউএসজে) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট লিখেছে নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় হবে দুনিয়ার জন্য ১০টি বড় বিপদের একটি। ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের সম্পাদকীয়তে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের প্রতি অনুরোধ করেছে, ট্রামের মনোনয়ন ঠেকাতে সম্ভাব্য সবকিছু করার। রিপাবলিকান মনোনয়ন লড়াইয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। পোস্ট লিখেছে, যা চিন্তাই করা যায় না, তা ঘটতে চলেছে…। রিপাবলিকান মনোনয়ন পেতে চলেছেন ট্রাম্প।
প্রভাবশালী পত্রিকাটি লিখেছে, সবাই মিলে চেষ্টা করলেও এখন আর ট্রাম্পকে আটকানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে পার্টি নেতারা তাদের সামর্থের সর্বোচ্চ চেষ্টা না করলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
ট্রাম্প-বিরোধী সবচেয়ে কড়া রিপোর্ট এসেছে সম্ভবত ডব্লিউএসজেতে। ওয়াল স্ট্রিট পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছে, ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে হিলারি ক্লিনটন সমগ্রিকভাবে যত ভোট পেয়েছেন, রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের প্রাপ্তভোট তার চেয়ে কম। ডব্লিউএসজে লিখেছে, অধিকাংশ রিপাবলিকানের সমর্থন জিততে না পারা প্রার্থী, কোনোভাবেই নভেম্বরে অধিকাংশ আমেরিকানের সমর্থন পাবেন না।
ওয়াল স্ট্রিটের সমালোচনা নিঃসন্দেহে ট্রাম্পকে সবচেয়ে বেশি ক্রুদ্ধ করবে, কারণ এরা রিপাবলিকানপন্থী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত এবং ট্রাম্পের ভোটারদের ওপর ডব্লিউএসজের প্রভাব রয়েছে।
ট্রাম্প তাই ছেড়ে কথা বলেননি, তিন বড় পত্রিকার বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন তিনি। ট্রাম্পের মতে, এই পত্রিকাগুলোর সম্পাদকীয়তে কী লেখা হচ্ছে তা কেউ পাত্তা দেয় না। স্পষ্ট করে বলেছেন, এদের মন্তব্য নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।
ডব্লিউএসজে লিখেছে, প্রাইমারিতে হিলারিকে ভোট দিয়েছেন ৮,৬৪৬,৫৫১ জন, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৭,৫৩৩,৬৯২ জনের সমর্থন। ট্রাম্পের জবাব, হিলারিকে লড়তে হয়েছে তিন জনের বিরুদ্ধে, আর আমার প্রতিপক্ষ ছিল ছয়জন। তিনি আরো লিখেছেন ওয়ালস্ট্রিট অঙ্কে কাঁচা! বোঝাই যাচ্ছে, যুক্তি আর কুযুক্তি, যখন যা ইচ্ছে বকে যাচ্ছেন এই বিলিয়নিয়র।
রিপাবলিকান পার্টি নেতাদের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ঘোষণা অনুসারে নির্বাচনে জিততে পারলে ট্রাম্প প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও পার্টি নেতাদের সতর্ক করেছে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকাটি। পোস্টের মতে, অভিবাসী, নারী, ইহুদি, মুসলমান, মেক্সিকান এমনকি প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কেও প্রচারণায় অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
তবে রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রার্থী সম্পর্কে কঠিনতম মন্তব্য এসেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের কাছ থেকে। দি ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করবে। চীন সম্পর্কে তার একাধিক বৈরী মন্তব্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস আগেই জানিয়েছিল, নিউইয়র্ক বিলিয়নিয়র নন, রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তাদের পছন্দ ওহাইও গভর্নর জন কাসিচ।
এদিকে গত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি আগামী প্রাইমারিগুলোতে টেক্সাস সিনেটর টেড ক্রুজকে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ওহাইওতে গভর্নর জন কাসিচের সাথে প্রচারণা চালানোর সময় রমনি বলেন, ট্রাম্পকে থামানোর একমাত্র পথ ক্রুজকে ভোট দেওয়া।
রমনি বলেন, রিপাবলিকানিজমের বিরুদ্ধে ট্রামিজমের লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। ট্রাম্প অবশ্য রমনির মন্তব্যকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। সমর্থকদের আকৃষ্ট করতে চমকদার, আগ্রাসী বা প্রয়োজনে ভিতিকর মন্তব্যও করে যাচ্ছেন তিনি। সল্ট লেক সিটিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ! তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেই যুক্তরাষ্ট্র আবার বিশ্বনেতা হয়ে উঠতে পারবে।
নানা বিতর্কিত কথা ও কাজের কারণে শুধু উদারপন্থী নন, রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের সমর্থনও হারাতে বসেছেন ট্রাম্প। কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত জনপ্রিয় রেডিও হোস্ট এরিক এরিকসন ঘোষণা দিয়েছেন, বিলিয়নিয়রকে হারাতে প্রয়োজনে তৃতীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাবেন তাঁরা।
ট্রাম্প এ পর্যন্ত ৬৭৮ ডেলিগেটের সমর্থন জিতেছেন। টেড ক্রজ পেয়েছেন ৪২৩ প্রতিনিধির ভোট। আর গভর্নর কাসিচের আছে ১৪৩ প্রতিনিধির সমর্থন। রিপাবলিকান মনোনয়ন পেতে ১২৩৭ ডেলিগেট ভোট প্রয়োজন।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন