পাবনা জেলার ১৯৭তম জন্মদিন আজ

আজ ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেশের অন্যতম প্রাচীনতম ও ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা পাবনার ‘জন্মদিন’। এবার পাবনা জেলার বয়স বেড়ে দাঁড়ালো ১৯৭ বছর।
১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর পাবনাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাবনার জন্মদিন উপলক্ষে ‘পাবনা প্রেসক্লাব’ ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ সহ বিভিন্ন একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
পাবনা জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৯০ সাল অবধি বর্তমান পাবনার বেশীরভাগ অংশ রাজশাহী জেলার একটি থানা হিসাবে ছিল। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট এ ডাবিøউ মিল্সকে ১৮২৮ সালে পাবনায় জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর পাবনাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর চার বছর পর ১৮৩২ সালে জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেটের পরিবর্তে ডেপুটি কালেক্টর নিয়োগের মাধ্যমে পাবনা পায় পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পায়।
কোম্পানি শাসনের অবসানের পর ১৮৫৮ সালে বৃটিশ সম্রাজ্ঞী রাণি ভিক্টোরিয়ার শাসনাধীনে চলে যায় পাবনা জেলা। এর আগে ১৮৫৫ সালে ময়মনসিংহ জেলা থেকে সিরাজগঞ্জ থানাকে পৃথক করে পাবনা জেলার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি মাসের জেলার ঈশ্বীরদীতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়। প্রথম মোটর সার্ভিসের প্রবর্তন করা হয় ১৯২৬ সালে। ১৯৪০ সালের পর পাবনা শহরে রিকশার প্রচলন ঘটে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ভুটা আন্দোলন, খাপড়া ওয়ার্ড আন্দোলন মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনসহ সবক’টি আন্দোলন সংগ্রামে পাবনা জেলার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।
হোসিয়ারি শিল্প, তাঁত, কাঁচি, বেনারসি-কাতানসহ অন্যান্য শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলা একসময়ে ছিল দেশের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। ৩৫১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলা ৯টি উপজেলা, দু‘টি থানা ও ৭৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
‘পাবনা’ নামকরণ যেভাবে : রাধারমন সাহা তার ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থে পদ্মার অববাহিকা ‘পাবনী’ থেকে পাবনা’র নামকরণ হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ফরাসি শব্দ ‘পানবহ’ এর অভিধানিক অর্থ তুলা বা তুলাজাত দ্রব্য।
তন্তুবায়ী বা তাঁতীর সংখ্যাধিক্য ছিল এই জেলায় প্রাচীনকাল থেকেই। এই সব তন্তুবায়ীরা তুলা বা তুলাজাত দ্রব্য থেকেই কাগজ তৈরী করত। এই জাতিবাচক শব্দ ‘পানবহ’ থেকে পাবনা শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন।
ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায়- প্রাচীন জনপদ পুন্ড্রবর্ধনের নামকরণ হয়েছিল ভূতপূর্ব বাঙ্গালা রাজ্যের সামন্ত রাজা পুন্ড্রবর্ধনের নামানুসারে। এর উপরাজ্যে এলাকা পান্ডবভূমি হিসেবে খ্যাত। তার কেন্দ্রস্থল ছিল পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়। অনেকে মনে করেন, প্রাচীন জনপদ পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি ঘটেছে।
আবার কেউ কেউ বলেন, পুন্ড্রবর্ধনের বংশধর রাজা জয়বর্ধনের আমলে পাবনা শহরের পাঁচ মাথা দুর্গামন্দির (বর্তমানে সোনাপট্রি) স্থানে পান্ডবভূমির একটি সাব-কাচারী বাড়ি ছিল। পান্ডব প্রশাসনের বৈঠকখানা কেন্দ্রিক একটি জনপদ গড়ে উঠলে স্থানটির নামকরণ হয় পান্ডবখানা। উচ্চারণের সুবিধার্থে কালক্রমে দপান্ডবখানাদ শব্দ থেকে ‘ন্ড’ এবং ‘খা’ বর্ণগুলো লোপ পেয়ে কালের বিবর্তনে ‘পাবনা’য় রূপান্তর হয়।
সন্ধ্যাকরনন্দী রচিত ‘রামচিত্র’ গ্রন্থে ‘পদুবম্বা’ নামে একটি সামন্তরাজ্যের উল্লেখ দেখা যায়। রাজ্যটির রাজা সোম সম্ভবত পাল রাজাদের সামন্তরাজা ছিলেন। ‘পদুবম্বা’ নামে প্রাচীন রাজ্যটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে ভিন্নমত থাকলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বর্তমান পাবনার এই জনপদটিকেই প্রাচীন ‘পদুবম্বা’ রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং সামন্তরাজ্য ‘পদুবম্বা’ থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি ঘটেছে এ মতও অনেকে পোষণ করে থাকেন। কারো কারো মতে, কিংবদন্তীতুল্য দুর্র্ধষ ডাকাত ‘পবন’ এর নামানুসারে ‘পাবনা’ নামকরণ হয়েছে।
জেলা গঠনের ১৯৭ বছর পর ২০০৮ সালে ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম পাবনা জেলার জন্মদিন উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তিতে পাবনা প্রেসক্লাবসহ বিািভন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করে।
এদিকে পাবনা জেলার জন্মদিন উপলক্ষে ‘পাবনা প্রেসক্লাব’ বেলা সাড়ে ১২টায় এবং ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ সন্ধ্যায় প্রীতি সম্মিলনি, কেক কাটাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উভয় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, দিবসাটি পাবনাবাসীর জন্য গর্বের। তাই এই দিবস পালনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজকের প্রজন্ম ফোরামের সভাপতি খালেদ হোসেন পরাগ জানান, জেলার জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্জলন, আজকের প্রজন্ম ফোরাম আড্ডা, কেক কাটা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
লেখক : স্টাফ রির্পোটার, পাবনা অফিস।