ভালোবাসা দিবস
নয়নে নয়ন রেখে ভালবাসি
আজ ভালোবাসার দিনে কোনো কথা হবে না, কোনো কিছু প্রাপ্তির আশা বাদ দিয়ে শুধু নৈঃশব্দের অপার অনুভবে চোখে চোখ রেখে হৃদয়ে হৃদয় মিলিয়ে দয়িত বা দয়িতার সাথে অমৃত ভাব বিনিময় হবে সারাবেলা। কথার জাদুতে গড়া প্রেমের কারিগর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমনটা বলেছেন,
‘অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি।
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি।’
অন্যদিকে ইংরেজ কবি ও নাট্যকার শেক্সপিয়র বলেছেন,
‘Speak low, if you speak love!’
ভালোবাসার বরপুত্রদ্বয় উইলিয়াম শেক্সপিয়র ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খোদ ভালোবাসা নিয়ে যতই কম কথা বলার উপদেশ দিন বা প্রিয়স্পদের ভাষা না বোঝার আশা জলাঞ্জলি দিন। আসলে ভালোবাসার সব ব্যথা, সব কথা, আশা-নিরাশার যত দোলাচল তার সবটাই বলে গেছেন এবং সবটাই বোঝে গেছেন তাঁরা।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আমলে চিকিৎসক ও খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারক কারাগারে বন্দি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সাথে কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও দেখা করতে আসত। একসময় তাঁর চিকিৎসায় মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলে তাঁদের মধ্যে ভালো লাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ অপরাধেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভ্যালেন্টাইন তাঁর লেখা শেষ চিঠিতে প্রেয়সীকে লিখেছিলেন ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’।
৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ প্রথম জুলিয়াস এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। আর আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনের সুযোগ এসেছে নব্বইয়ের দশকে এক কচ্ছপপ্রাণ প্রেমিকপুরুষের রাজত্বকালে। ভালোবাসা দিবস প্রচলনের কৃতিত্ব তাঁদের ওপরও বর্তায় বটে। তবে মাঝখানে এক নিপুণ অনুঘটক ছিলেন লাল গোলাপের বিখ্যাত এক প্রেমিক সওদাগর।
ভালোবাসা একটি অতি আনন্দদায়ক মানবিক অনুভূতি, যেটা একজন মানুষ আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। এমন একটি আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতায় কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা, নিঃস্বার্থতা, বন্ধুত্ব, মিলন বা আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হয়। তবে এই ইচ্ছেটা কেবল যে, মনুষ্য হয়ে মনুষ্য প্রজাতির প্রতিই দুর্নিবার হয়ে দেখা দেয় বিষয়টা এমনও নয়। ভালোবাসার প্রকাশটা অনেকটা নানামুখী আপেক্ষিকতার ওপর নির্ভরশীল।
মনে রাখলে ভালো কিংবা কারো ক্ষেত্রে হতে পারে অতিশয় মন্দ! ভালোবাসায় যৌনবাসনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা একটা গৌণ বিষয়। তবে মানবিক আবেগটাকে গুরুত্ব দিয়ে কল্পনাবিলাসিতায় গা ভাসানোর উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র মহান ভালোবাসা
আসুন এবার এই ভালোবাসা দিবসে কল্পনাবিলাসিতা বা রোমান্টিসিজমে আমরা গা ভাসাই প্রিয়তমেষুর হাতে হাত ধরে এবং নয়নে নয়ন রেখে। আজ এই মুহূর্ত থেকে ভালোবাসার ঋণাত্বক অনুভূতি ঘৃণাকে আমরা প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করতে শিখি।
ছায়াদানকারী এই বটবৃক্ষদের অমৃত প্রেম আপনারা প্রত্যাখ্যান করবেন সেই দুঃসাহস যেন কস্মিনকালেও না ঘটে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবি নিতাইয়ের মুখের সেই অমোঘ বাণী মনে পড়ে যায়, ‘ভালোবেসে মিটিল না সাধ/কুলাল না এক জীবনে/ হায়রে জীবন এত ছোট কেনে?’
লেখক : সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টেলিভিশন।