বঙ্গভবনে বিচারপতিদের ‘চায়ের দাওয়াত’ উপাখ্যান
নির্বাচন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন বিএনপি ও জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে অগ্নিগর্ভ ছিল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্তব্যক্তিরাও দেশের রাজনৈতিক বৃহৎ দল দুটিকে তাদের অনড় অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেননি। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে, এমনকি জনপ্রশাসনসহ গোটা দেশেই গুমোট অবস্থা তৈরি হয়েছিল ওই সময়। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের শাসনভার গ্রহণ করে একটি নতুন পদ্ধতির সরকার, যা পরবর্তিতে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ বা এক-এগারো সরকার নামে পরিচিতি পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ১৩ জন উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। যদিও এ সরকারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ প্রাদপ্রদীপে চলে আসেন। ওই সরকারের যাবতীয় কার্যক্রম তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে।
এক-এগারো সরকার দায়িত্ব নিয়েই দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তারীণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তবে, রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে আপোষ করে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হন বলে আলোচিত হন। সে সময় ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলা নিয়েও কাজ করেন অনেকে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুনভাবে গড়ে ওঠে কয়েকটি ‘কিংস পার্টি’।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো উচ্চ আদালতও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জোর চেষ্টা করে। কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতাদের নামে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় বিশেষ এজলাসও স্থাপন করা হয়। সরকারের কোনো কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করতে সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে দু’একজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর আদালতের বারান্দা পর্যন্ত গড়ায়নি। ওই সময় বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে বঙ্গভবনে হাইকোর্টের বিচারপতিদের ‘চায়ের দাওয়াত’-এর কথা। ওয়ান ইলেভন সরকার আমলে আলোচনার শীর্ষে ছিল এই ‘চায়ের দাওয়াত’ কাহিনী।
‘চায়ের দাওয়াত’ উপখ্যান
‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরের ঘটনা। একদিন সন্ধার পর অফিসে কাজ করছিলাম। রিসিপশন থেকে ফোন করে জানানো হলো সুপ্রিমকোর্ট থেকে একজন কর্মকর্তা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। রিসিপশনে গিয়ে দেখেই চিনতে পারলাম। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারী তিনি। বেশ উদ্বিগ্ন, চিন্তিত ও ভয়ানক টেনশনে আছেন বলে মনে হলো।
কেমন আছেন জানতে চাইলে বললেন, ‘আপনার সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলতে এসেছি। মাইলর্ড (বিচারপতি) পাঠিয়েছেন। অন্য কারও সামনে বলতে নিষেধ করেছেন।’ তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, ‘আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন। কেউ শুনবেও না, আবার জানবেও না।’
আমার কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হয়েও ইতস্তত করলেন তিনি। বললেন, ‘মাইলর্ড আজকে তিন দিন হাইকোর্টের খাস কামরায়। তিনি হাইকোর্ট থেকে বের হচ্ছেন না। আপনাকে এখনই একটু যেতে বলেছেন।’ শুধু তিনি একাই নন, আরও কয়েকজন বিচারপতিরও একই অবস্থা বলে জানালেন তিনি। তার কথা শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। কয়েকদিন হলো সুপ্রিমকোর্টে ভ্যাকেশন চলছে। ফলে নিউজও নেই, আমাদের যাওয়া-আসাও নেই। এরমধ্যে আবার কী এমন ঘটনা ঘটল, বিচারপতিরা তাঁদের খাস কামরায় বন্দি হয়ে আছেন!
ওই বিচারপতির সঙ্গে আমার সখ্য অনেকদিনের। হয়তো এ দাবিতেই তিনি বিশ্বাস করে তার ব্যক্তিগত সহকারিকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করতে আমাদের উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ স্যারের কক্ষে গেলাম। তিনি সব শুনে নির্বাহী সম্পাদক রাশীদ উন নবী বাবু ভাই ও বার্তা সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ ভাইকে তাঁর কক্ষে ডাকলেন। তাঁরা সবাই বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘তুমি নিরাপদ মনে করলে যেতে পারো।’ ‘এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে’ বলে কিছুটা উৎসাহও দিলেন।
বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারিকে বিদেয় করে দিয়ে বললাম, আপনি চলে যান। আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি। তাকে বিদেয় করে দিয়ে দেরি না করে একজন সহকর্মী ফটো সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মোটরসাইকেলে চড়েই মাজারগেট দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে প্রবেশ করি। মূল ভবনের কাছে যেতেই ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সুপ্রিমকোর্টে ডিউটি করেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা। দীর্ঘদিন একসঙ্গে মাঠে থেকে কাজের সুবাদে তাদের সঙ্গেও মোটামুটি একটা ভালো সম্পর্কই তৈরি হয়েছে। তারপরও তাদের চোখ এড়াতে সহকর্মী ফটোসাংবাদিককে মোটরসাইকেল নিয়ে মাজারের কাছে অপেক্ষা করতে বলে আইনজীবী সমিতি ভবনে প্রবেশ করি।
পরিচিতি দু’একজন আইনজীবীর কক্ষে ঢু মেরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না বলেই মনে হলো। আইনজীবী সমিতির তিন তালায় ওঠে সংযোগসেতু ধরে সুপ্রিমকোর্টের মূলভবনে প্রবেশ করে সেই বিচারপতির খাস কামরায় গেলাম। কক্ষে প্রবেশ করতেই তিনি (বিচারপতি) জড়িয় ধরে হাউমাউ করে করে কেঁদে উঠলেন। আমি যতটুকু তাঁকে চিনি। তিনি খুবই দৃঢ় ও স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। তাঁর কাছ থেকে আইনের অনেক কিছু শিখেছি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক তিনি। অথচ, তিনি এই নগণ্য একজন সংবাদকর্মীকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন!
আমার কাছে খবর নিয়ে যিনি গিয়েছিলেন তিনি তখনও ফেরননি। কক্ষে আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই বিচারপতি জানালেন, ‘আমাদের হাইকোর্টের বিচারপতিদের বঙ্গভবনে চা খেতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।’
বললাম, তাতে কী হয়েছে? মহামান্য রাষ্ট্রপতির চায়ের দাওয়াত তো আর যে কেউ পায় না। এটাতো খুশির সংবাদ। আপনি এতটা বিচলিত কেন? জবাবে বিচারপতি জানালেন, ‘এটা সাধারণ দাওয়াত নয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এ চিঠি পেয়ে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক জনাব এ কে বদরুল হক সাহেব গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। তিনি আর হাইকোর্টে ফিরে আসতে পারেননি। বঙ্গভবনে আগে থেকেই তাঁর নামে তৈরি করা একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে গাড়ি থেকে পতাকা নামিয়ে তিনি নিজ বাসায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ঘটনা শোনার পর আমরা আর কেউ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করছি না। সবাই নিজ নিজ খাস কামরায় অবস্থান করছি।
কতজন বিচারক ‘বঙ্গভবনের চায়ের দাওয়াত’ পেয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কতজন তা নিশ্চিত করে বলতে পারব না। প্রত্যেককেই আলাদা আলাদা চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে, সংখ্যাটা কুড়ি থেকে একুশ হতে পারে বলে শুনেছি।’
চিঠিটি দেখতে চাইলে তিনি নিজের ডেস্কের ড্রয়ার খুললেন। কিন্তু চিঠিটি বের করলেন না। কয়েক মিনিট চুপ করে কী যেনো ভাবলেন। পরে কিছুটা ইতস্তত করেই বঙ্গভবনের লোগো সম্বলিত খামটি আমার হাতে দিলেন। খামটির মুখ খোলাই ছিল। খামটি খুলে চার থেকে পাঁচ লাইনের চিঠিটি পড়লাম। তাতে লেখা রয়েছে, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে আপনাকে বঙ্গভবনে এসে চা পানে আপ্যায়িত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
চিঠিটি পড়ার সময়ই বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারি এসে পৌঁছলেন। ওই সময় মোবাইলে ক্যামেরা না থাকায় চটজলদি ছবি তুলতে পারিনি। ফলে তাঁর কাছে চিঠির কোনো ফটোকপি আছে কি না, জানতে চাইলাম। তিনি না সূচক জবাব দিলে সঙ্গেসঙ্গেই স্মারক নম্বর ও স্বাক্ষরকারীর নামসহ পুরো চিঠিটি একটি সাদা কাগজে লিখে নিলাম। তাঁকে বললাম, আপনার ব্যক্তিগত সহকারিকে দিয়ে আইনজীবী সমিতি ভবনের ছাদে ফটোকপির মেশিনের দোকান থেকে একটি কপি করে এনে দিন।
চিঠির কপিটি নিয়ে সহকর্মীকে নিয়ে তার মোটর সাইকেলে চড়েই দ্রুত কারওয়ান বাজারে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয়ে এসে পৌঁছি। উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ স্যারকে চিঠি দেখাতেই বললেন, ‘তুমি লিখে ফেলো। তারপর নিউজটি নিয়ে আমরা বসব।’
সাংবাদিকতার সব নিয়ম ও রীতিনীতি মেনেই দ্রুত নিউজটি তৈরি করে উপদেষ্টা সম্পাদকের হাতে দিলাম। তিনি নির্বাহী সম্পাদক বাবু ভাই, বার্তা সম্পাদক সৈয়দ আবদাল ভাই ও আমাকে নিয়ে মিটিংয়ে বসলেন। ওই সময় সম্পাদক আমানুল্লাহ কবীর ভাই অফিসে না থাকায় উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ স্যার নিজেই তাঁর সঙ্গে নিউজের মেরিট ও এভিডেন্স নিয়ে টেলিফোনে কথা বললেন। বৈঠকে সিদান্ত হলো, নিউজটি আট কলামে লাল রংয়ে ‘ব্যানার-লিড’ করা হবে।
আতাউস সামাদ স্যার বললেন, ‘যদিও সময়টি ভালো নয়, তারপরও আমি বলব—নিউজটি বাইলাইন যাওয়া উচিত।’ বাবু ভাই আমার দিকে তাকাতেই বললাম, ‘এটি আমার জন্য হবে অনেক বড় প্রাপ্তি।’ চিঠির কপিটি অফিসে আতাউস সামাদ স্যার নিজের কাছে রেখে দিয়ে বললেন. ‘এবার বাসায় যাও। তবে, একটু সতর্ক থেকো।’ ভাবলাম, স্যার হয়তো তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথাটি বলেছেন।
চাপ মোকাবিলা
অফিসের কাজ শেষে বাসায় পৌঁছি রাত সাড়ে ১১টার দিকে। ওই সময় রাত ১২টায় বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে পর্যালোচনা করত। ফলে রিমোর্ট নিয়ে ঘুরেঘুরে টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে লাগলাম।
প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেলেই ওদিনের আলোচার মূল বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় দৈনিক আমার দেশ’-এ ‘বঙ্গভবনে বিচারপতিদের চায়ের দাওয়াত’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি। এর কিছুক্ষণ পরই বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সহকর্মীরা ফোন করতে থাকেন। কেউ কেউ ‘সেকেন্ড এডিশন’-এ সংবাদটি প্রকাশেরও আগ্রহ দেখিয়ে ‘এভিডেন্স’ আছে কি না, জানতে চাইলেন। এরই মধ্যে রাশীদ উন নবী বাবু ভাই ফোন করে জানালেন, ‘এই শোনেন, সামরিক গোয়েন্দা দপ্তর ফোন করে রিপোর্টটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। বঙ্গভবনের চায়ের দাওয়াতের চিঠি আছে কি না, সেটাও জানতে চেয়েছে। উপদেষ্টা সম্পাদক সবকিছু বলেছেন। আপনার মোবাইল নম্বর চেয়েছে। তাদের পিড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত ফোন নম্বরটি দিতে হয়েছে। আপনি ঘাবড়াবেন না, অবিচল থাকবেন। শুধু বলবেন—এ রিপোর্টের বিষয়ে সব দায়দায়িত্ব অফিসের। নথিপত্র সব অফিসেই সংরক্ষিত আছে। আপনাকে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন করবে।’ এতটুকু বলেই বাবু ভাই ফোন রেখে দিলেন।
বাবু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিজের পরিচায় দিয়ে বেশ সাবলিল ভাবেই কথা বললেন। তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন। প্রতিটি প্রশ্নের জবাবেই ‘অফিস এ বিষয়ে জানে। আমি শুধু রিপোর্টটি তৈরি করেছি।’ এর বাইরে আর বেশি কিছু বলিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি অনেকটা বিরক্ত হয়েই বললেন, ‘আপনি মোবাইলটি খোলাই রাইখেন। প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে আবার কথা বলতে হতে পারে।’ তার সঙ্গে কথা বলার পরপরই মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম পাশে ফুফুদের বাসায়। ওই বাসায় গিয়ে রাত কাটালাম।
পরদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে নাস্তা সেরে লাউঞ্জে এক কাপ চা নিয়ে বসতেই খবর আসল আমাদের বার্তা সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল ভাইকে ডিজিএফআই হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। খবরটি শোনার পরপরই অজানা আতঙ্কে অস্থির লাগছিল। তবে, সহকর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিকরা রিপোর্টটির জন্য বেশ উৎসাহ দিলেন, আবার সতর্কও করলেন অনেকে।
আবদাল ভাইকে ছাড়িয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে জোরাল চেষ্টা চালানো হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো ভালো খবর আসেনি। ওই সময় অবশ্য দু’একজন ছাড়া অধিকাংশ সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা ছিলেন সেনা সমর্থিত ক্ষমতাসীন ওই সরকারের ঘোর বিরোধী। সন্ধ্যার দিকে প্রেস ক্লাবে সব পর্যায়ের সাংবাদিক নেতা ও অধিকাংশ সম্পাদকরা এসে একটি বৈঠকে বসলেন। বৈঠক থেকে একটি আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হলো—রাত ৯টার মধ্যে সৈয়দ আবদাল আহমদকে সম্মানের সঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এনে পৌঁছে দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সাংবাদিকরা পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সাংবাদিকদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই রাত পৌনে ৯টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি গাড়িতে করে আবদাল ভাইকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিয়ে আসলে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তবে, ওদিন থেকেই আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ‘গণতন্ত্র উদ্ধার’-এর আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হয়। বঙ্গবভনে চায়ের দাওয়াত পাওয়া বিচারপতিদেরকেও আর চা পানে আপ্যায়িত হতে হয়নি।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক