আমার শিশুরা কোথায় নিরাপদ?

ছোট্ট কফিনের ভার বইবে, এমন সাধ্য আছে কার? সন্তানের লাশের ভারে পিতার কাঁধ ভারী হওয়ার এমন কষ্টের অধ্যায়গুলো ফিরে ফিরে সবার হৃদয়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছে। ছোট্ট নিষ্পাপ ফুলগুলো যেন এক লহমায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পড়ে আছে স্কুলব্যাগ, আধখাওয়া টিফিন বক্স, জুতাগুলো গলে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়।
মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্তব্ধ করেছে সবার বিবেক।
বিমানটি হয়তো শেষ সময়েও উড়তে চেয়েছিল। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরও হয়তো নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টায় আকাশের সীমানায় জীবন বাঁচাতে যোগ্যতার শেষ সীমানা টপকানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় রত ছিলেন। তবুও নিয়তি নিষ্ঠুর, মর্মান্তিক পরিহাস। জীবন টপকাতে পারেনি ভাগ্যের দেয়াল।
ঘুম ঘুম চোখের সকাল কিংবা স্কুলে যাওয়ার ঘড়ির এলার্মও জানতো না একটা তপ্ত দুপুর লেখা হবে আগুন পোড়া ছাইয়ে। সন্তানের বায়না, দুরন্তপনা আর ইচ্ছে পূরণের জেদ থেকে কি বেঁচে গেলেন বুক হিম হয়ে থাকা বাবা-মায়েরা?
চিন্তার পরিধি কেবলই ঝাপসা হয়ে আসে। নোনা জলে ভরে যাওয়া চোখের কোণে কেবলই বিয়োগের ব্যাথা। রোদটুকু সহ্য না হওয়া সন্তানেরা পুড়ে পুড়ে ছাই হলো। তাদের প্রতিটি সেকেন্ড পুড়েছে দগ্ধতায়।
নির্বাক জীবনে মাইলস্টোনের এই মৃত্যুপুরী বিবেকের কড়চায় আবারও রেখে গেল অজস্র প্রশ্ন। এই মৃত্যু শুধু নিরাপত্তাহীন ঝুঁকির বার্তাই দিয়ে যায়নি, মগজের উপকূলে রেখে গেল এই অনিরাপদ নগরের অনিবার্য পরিণতির ভবিতব্যও।
প্রতিনিয়ত যে নগরে প্রতিযোগিতার আয়োজন, সেখানে ন্যূনতম বেঁচে থাকবার অধিকার নিশ্চিতে কতটা দায় বা দায়িত্বের ছাপ রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। জননেতা বা প্রতিনিধি হওয়ার যে দৌড় দেখি, দায়িত্ব নেওয়ার বা নির্বাচিত হওয়ার যে প্রতিযোগিতা দেখি, ততটা প্রতিযোগিতার দেখা মেলে না প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে। দেয়ালে দেয়ালে নিরাপদ নগর গড়ার যে মিথ্যে বুলির পোস্টার সাটা থাকে, এই অনিরাপদ নগরে তাও কি কাউকে ভাবায়?
বুকের মানিক হারানো পিতা-মাতারা আদরের সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে যখন নিরাপদ থাকেন, সেখানে দিয়াবাড়ি ট্র্যাজেডি সেই নিশ্চিন্ত থাকার প্রহরটুকুকেও গিলে নিয়েছে গোগ্রাসে। যেখানে নগরের জনাকীর্ণ জীবন, সেই আকাশে যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের অনুমতির ভবিতব্য কি? কিংবা নগর পরিকল্পনার এত যে আয়োজন সেখানে বিল্ডিং কোড মানা, না মানার প্রশ্নগুলো আসে শুধু তখনই, যখন এমন দুর্ঘটনা ঘটে। তাহলে মৃত্যুই কি একমাত্র সমাধান? নাকি এই নাগরিক ফুলগুলো বাঁচাতে কাজ করবে আধপোড়া বিবেক?
লেখক : স্পেশাল করেসপনডেন্ট, এনটিভি