হঠাৎ যেন আকাশটা আগুন হয়ে গেল : মাইলস্টোন শিক্ষার্থী

‘দুপুর ১টার দিকে আমাদের কলেজ ছুটি হয়। এরপর আমরা কোচিং ক্লাসে ছিলাম। আমি জানালার পাশে বসা ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হলো যেন কিছু একটা ব্লাস্ট হলো। জানালার পাশ থেকে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখতে পাই। আকাশটা যেন মুহূর্তেই আগুন হয়ে গেল।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের ওপর আছড়ে পড়ার ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কাইলানী গ্রামের মেয়ে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশলীনা রিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে আকাশলীনা রিয়ার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধির। আজও সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে তাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী আকাশলীনা রিয়া বলেন, ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে আমাদের কলেজ ছুটি হয়। এরপর আমরা কোচিং ক্লাসে ছিলাম। আমরা কলেজ ভবনের ছয়তলায় ছিলাম। আমি জানালার পাশে। হঠাৎ বিকট শব্দ। মনে হলো যেন কিছু একটা ব্লাস্ট হলো। জানালার পাশ থেকে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখে মনে হলো আকাশটা যেন আগুন হয়ে গেল। তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সবাই দৌড়ে নিচে নেমে যাই। প্রথমে মনে হচ্ছিল ছেলেদের বিল্ডিংয়ে কিছু হয়েছে। নিচে গিয়ে দেখি, শিশুদের ভবনের সামনে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা তখনও পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু কিছু সময় পর যখন একটার পর একটা পোড়া দেহ বের করে আনা হচ্ছিল, তখন মনে হলো যেন পুরো পৃথিবী থেমে গেছে।
রিয়া আরও বলে, বিমানটি শিশুদের ‘স্কাই’ সেকশনের গেটের সামনে পড়েছে। প্রতিদিন বাচ্চারা ছুটির পর সেই গেট দিয়েই বের হয়। মাত্র ১০ মিনিট পর তাদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো আগুনে ঝলসে যায়।
এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ঘটনার পর পরই তাকে গ্রামের বাড়ি নাজিরপুরে নিয়ে আসেন তার মা-বাবা। এখনও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি।
রিয়ার প্রতিবেশী অপর্ণা মৈত্র বলেন, রিয়া বাড়িতে আসার পর থেকে কারো সঙ্গে বেশি কথা বলছে না। আমরাও রিয়ার কাছে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করি না। ও ওই ঘটনা মনে করলে কেমন যেন একটা আতঙ্কে থাকে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিয়ার মা স্কুলশিক্ষিকা অরতি মজুমদার বলেন, ঘটনার একদিন আগে আমি আমার মেয়েকে হোস্টেলে রেখে বাড়িতে আসি। আসার দিন রিয়া আর একটা দিন ওর সঙ্গে থাকার কথা বলে কান্নাকাটি করে। রিয়া ভর্তি হওয়ার পর এমন কান্নাকাটি কখনও করেনি। বিমান দুর্ঘটনার পর পরই রিয়া আমাকে ফোন করে বলে মা আগুন, আগুন। আর কিছুই বলতে পারছিল না। আমি তখন স্কুলে ছিলাম। টিভিতে ঘটনাটি দেখে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করে। রিয়ার বাবাকে ফোন দিয়ে বললে সে সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা রওনা দেন। ওই ঘটনার পর রিয়া কেমন যেন হয়ে গেছে। খুব একটা কথা বলে না। চুপচাপ থাকে আর মাঝেমধ্যে আঁতকে ওঠে।
রিয়ার বাবা রিপন মৈত্র বলেন, আমি রিয়ার মায়ের ফোন পেয়ে যে অবস্থায় এবং যে পোশাকে ছিলাম সেভাবেই ঢাকা রওনা দেই। এ রকম বিভীষিকাময় দৃশ্য আমি আগে কখনও দেখিনি। ছোট ছোট বাচ্চাদের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলে রাখা যায় না। ভগবান আমার মেয়েকে রক্ষা করেছেন কিন্তু কত মা-বাবার কোল যে খালি করেছেন। আমি ঘটনার দিন রাতেই রিয়াকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।