ফটোসাংবাদিক নুরুদ্দীন আহমেদের সাজায় প্রবাসী সাংবাদিকদের ক্ষোভ
হত্যা মামলায় জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সাবেক সদস্য নুরুদ্দীন আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজন।
আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সিডনির কিংস জর্জ রোড গ্রামীণ সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ক্ষোভ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শ্রাবণ। তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগপত্রে তাঁকে (নুরুদ্দীন) বলা হয়েছে, তিনি ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন। বাস্তবে এর কোনো সত্যতা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষীও এমন কথা বলেননি।’
এ সময় ‘দৈনিক মিল্লাত’-এর সাবেক বার্তা সম্পাদক ইসমাইল দেওয়ান বলেন, ‘যখন এ ঘটনা ঘটে তখন নুরুদ্দীন আহমেদ দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেদিন অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যান। কিন্তু ময়মনসিংহে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আর যাননি। সুতরাং পরিষ্কার যে, তিনি কারো ইনটেনশনের শিকার। তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আপডেট বিডিনিউজের সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, ‘যে মামলায় তাঁকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে, সে ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।’
রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যখন নানা কারণে পত্রিকা-টিভি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’ সাংবাদিকরা যদি এভাবে বিনা কারণে জেলে যান, তাহলে পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সিডনি প্রেস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও বিদেশ বাংলা টোয়েন্টিফোর-এর সম্পাদক আবদুল মতিন সাংবাদিকদের সব মত-পথ ভুলে নিজেদের অধিকার ও পেশাগত দায়িত্ববোধের কথা ভেবে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি নুরুদ্দীনের মতো একজন পুরোদস্তুর সাংবাদিকের প্রতি যেন সত্যিকার ন্যায়বিচার করা হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীম, চার্লস স্টুর্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক শুবলি অবদুল্লিয়াহ, সাংবাদিক নাঈম আবদুল্লিলাহ, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হাবিব, ড. চঞ্চল, সায়মন সারওয়ার, সিডনি প্রেস কাউন্সিলের সভাপতি ও ডিকিন ইউনিভার্সিটি শিক্ষক ড. এনামুল হক, সিডনি প্রেস কাউন্সিলের সদস্য নাঈম আবদুল্লাহ, বাসভূমি টিভির সম্পাদক আকিদুল ইসলাম, সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক মিজানুর রহমান সুমন, বাংলাদেশ টিভির প্রতিনিধি আসিফ ইকবাল প্রমুখ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ফ্রিডম পার্টির নেতা বজলুল হুদা, জয়নাল ও আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হল মোড়ে একটি চায়ের দোকানে থামেন। এ সময় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় হারুন নামের এক যুবক মারা যান। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন পথচারী জহুর আলী, মাহবুবুল, রামচন্দ্র, শামীম ও লিটন।
ওই দিনই ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল ও ভালুকায় ফ্রিডম পার্টির ৩০ নেতাকর্মী আটক হন। পরের দিন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত যুবকের ভগ্নিপতি মোশাররফ হোসেন বাবুল। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
১৯৯০ সালের ১১ অক্টোবর ময়মনসিংহের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। এ আদালতেই প্রায় ১৯ বছর মামলাটির বিচারকাজ চলে। বিচারকালে মামলার তদন্তে ত্রুটি থাকায় মামলাটি পুনরায় তদন্তও করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।