সিঙ্গাপুরে বিজয় দিবস নিয়ে কথা ও কবিতা
বাঙালি সংস্কৃতি প্রবাসের মাটিতে তুলে ধরার শপথ নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিত হয়েছে বিজয় দিবস। গত শনিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর শহরের বাঙালি অধ্যুষিত ৮৫ ডেস্কার রোডের হলরুমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে করেছিল সিঙ্গাপুর বাংলা সাহিত্য পরিষদ।
Our Victory, Our Poetry শিরোনামের অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করে।
এই পদ্মা, এই মেঘনা
এই যমুনা সুরমা নদী তটে...
আবু জাফরের কালজয়ী গানটি গেয়ে শোনান কবি ও কণ্ঠশিল্পী মুকুল হোসেন।
বাঙালির জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও বাঙালির জন্মকথা নিয়ে কথা বলেন কবি জাকির হোসেন খোকন, কবি জহিরুল ইসলাম, মাহবুব হাসান দিপু ও দেবব্রত বসু।
কবি জাকির হোসেন খোকন বলেন, বিজয় অর্থ হচ্ছে অর্জন, গৌরবময় কিছু, কুয়াশা ভেদ করে যে সূর্যটা উদিত হয়, প্রতিদিন সকালে যাকে মুঠোভরতি করে হেঁটে চলি আমার কাছে এটাই বিজয়। বঙ্গ থেকে শুরু হওয়া সেই দ্রাবিড় জাতি বারবার হেরেছে-জিতেছে কিন্তু মাথা নত করেনি, কয়েক হাজার বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগের পর বাঙালির পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের নাম হয়েছে ১৬ই ডিসেম্বর।
এই দিনেই বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড পেয়েছে যার নাম বাংলাদেশ।
জহিরুল ইসলাম বলেন, হাজার বছরের সংগ্রামী জাতিকে যিনি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার স্বাদ দিতে পেরেছেন, তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের কথা ও কবিতার কাছে বাঙালি আজীবন ঋণী হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানকারী সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, চির শ্রদ্ধা।
মাহবুব হাসান দিপু বলেন, ‘যুগে যুগে স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে রেখছিল কবিতা ও গান। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের বিজয় আমাদের গৌরব। বিজয়ে অবদান রাখা প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা বুকের ভেতরে নিয়ে প্রবাসের পথে পথে হেঁটে চলি।
বিশ্ব জানুক বাঙালি একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি, এ দেশের সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
কলকাতার কবি দেবব্রত বসু বলেন, ‘বাংলাদেশি আইডেন্টিটি আমার নেই, তবে বাঙালির প্রতিটি বিজয় আমার জন্য আনন্দের, বাংলা ভাষার নিজস্ব একটি দেশ আছে এই বিষয়টি সব সময় আমাকে অসাধারণ অনুপ্রেরণা দেয়।’
সঞ্চালক মনির আহমদ কথা ও কবিতার মাঝে তুলে ধরেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কিছু জাগরণী গান, পাঠ করেন গোবিন্দ হালদারের গীতিকবিতা
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।’
নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে, যে রক্তজ কিশোর তুমি বেরিয়ে এসেছো পথে,
স্বাধীনতা তুমি দীর্ঘজীবী হও।
সৈয়দ সামসুল হকের কবিতা
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের পর কোমল পলিমাটিতে
যেখানে এখন অনবরত পড়ছে কোটি কোটি পায়ের ছাপ।
স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি এম এ সবুর ‘এমন বাংলাদেশ দেখিনি’।
শেষকথায় কবি মুকুল হোসেন অনুষ্ঠানে আগত সবার প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করেন।
বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতিটি গৌরবময় দিনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘শরীরে গেঁথে থাকা এই বাঙালিত্ব আমাদের জন্য গৌরবের ও পরম শ্রদ্ধার।’