বইমেলার জন্য অপেক্ষা

Looks like you've blocked notifications!

আমি প্রবাসে থাকি অনেক বছর। সৌদি আরব ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে অনেক তফাৎ। আর বাংলাদেশ মাতৃভূমি বলে কথা। প্রবাসে এসেছি জীবিকার প্রয়োজনে। পরিবার-পরিজনকে ভালো রাখার জন্য দিন-রাত খাটি। নতুবা কে চায় প্রিয় মুখগুলো রেখে বহুদূরে অনাহূতের মতো পড়ে থাকতে? লেখালেখি করতাম দেশে থাকতে। কত কথা বলার ছিল। সাথে সংস্কৃতির চর্চাও। নাটক করে বেড়াতাম গ্রামে, শহরে। কিন্তু এগুলো মনের খোরাক হলেও তো দেহের খোরাক নয়। পেটে ভাত না থাকলে তো মন ভালো থাকবে না। তাই পাড়ি জমিয়েছি এই মরুর দেশে। বলতে গেলে স্বজনহীন এ দেশে মাতৃভূমির কিছুই সাথে আনতে পারিনি।

প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ থাকত। কাজে যেতাম, ফিরতাম, তবুও প্রাণ পেতাম না। তারপর একদিন মনে হলো, আগে তো লিখতাম। মনের কথাগুলো লিখি না কেন। তারপর আবার লেখালেখি শুরু করলাম। প্রবাসে অবসর সময় কম থাকে। তবু যতটুকু অবসর মেলে, ততটুকুই চেষ্টা করি লিখতে। কবিতাই বেশি লেখা হয়। আমার বলা ও না বলা কথাগুলোকে কবিতায় বলতে চাই। তারপর সেই লেখাগুলোই হাওয়াই তারে ভাসিয়ে পাঠিয়ে দেই বিভিন্ন পত্রিকায়। পত্রিকায় লেখাগুলো ছাপে। আমি আনন্দিত হই। ভালো লাগে এই ভেবে, আমার কথাগুলো আমার দেশের মানুষ পড়ছে। অনেকে ফেসবুকে, ই-মেলে সেসব লেখার প্রতিক্রিয়া জানান। আমার ভালো লাগে। সাহিত্যের সাথে থেকে প্রবাসেও আমার মন কিছুটা ভালো থাকে। 

অনেক লেখা জমা হয়ে আছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে ভাবলাম একটি বই করলে কেমন হয়? না হয় অনেক পাঠক পড়ল না। কালজয়ী না-ই বা হলো। তবু কেউ না কেউ তো পড়বে। আমার কথাগুলো তো আমি বলতে পারব! এটা কম কিসের। প্রকাশকও পেয়ে গেলাম এক ছোটভাইয়ের মাধ্যমে। বাছাই করা ৪০টি কবিতা দিলাম বইয়ের জন্য। বইয়ের নাম ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’। প্রচ্ছদ দেখে কি যে ভালো লেগেছে—তা বলে বোঝানো যাবে না। দেশে থাকতে অনেকবার বইমেলায় গিয়েছি। প্রবাসে থাকতে বইমেলার সময়গুলোকে খুব মিস করতাম। ইচ্ছে হতো লেখকদের মিলনমেলায় ছুটে আসি। বইয়ের উৎসবে যোগ দেই। কিন্তু আমি যে বাঁধা। যখনই দেশে এসেছি, বইমেলার সময়টাতে আসতে পারিনি। ছুটি একমাস বা দুই মাস। তারপর অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে গেছি। মনের ভেতরে কিছু দুঃখও জমা হয়ে গিয়েছিল। এবার যখন বই আসবে মেলায়, অনেক আগে থেকেই কোম্পানির কাছে ছুটির আবেদন করেছি। কোম্পানি মার্চ-এপ্রিল ওরা ছুটি দিতে চায়। আমি আমার ঊধ্বর্তনকে বোঝাতে চাই ফেব্রুয়ারি মাসে আমার ছুটি দরকার। কিন্তু তারা বোঝে না। আমার মন খারাপ হয়। তারপর কদিন আগেই হঠাৎ অফিস থেকে জানাল, আমার বিষয়টি তারা বিবেচনা করে দেখেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে আমি ছুটি পাব। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি আমার ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। কী যে ভালো লেগেছে এ সংবাদে তা বলার মতো না। 

অনেকদিন পর বাড়ি ফিরব। মা-বাবাকে দেখব, সন্তানকে দেখব। প্রিয় বইমেলায় আমার বই আসবে। আমি যেতে পারব। আবার মিলনমেলায় অংশ নিতে পারব। ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠছে। এটি আমার প্রথম বই। তাই আনন্দ কম নয়। আবার চার-পাঁচবছর পর পরিচিত লেখক বন্ধুদের সাথে দেখা হবে—তাও অনেক খুশির বিষয়। পত্রিকায় পড়েছি, বইমেলা সম্প্রসারিত হয়েছে। বেড়েছে লেখক ও পাঠক। ফেসবুকে ঢুকলেই বইমেলার আমেজ পাচ্ছি। নতুন নতুন বইয়ের খবর জানাচ্ছেন লেখকরা। এসব দেখে আর তর সয় না। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জানুয়ারির শেষ দিকে দেশের মাটিতে পা রাখব। অল্প কদিন আর বাকি। প্রবাসে বসে বসে সেই দিনের প্রতীক্ষা করি। বইমেলার প্রতীক্ষা করি। আমার বইয়ের প্রতীক্ষা করি। আমার এই আনন্দ, উচ্ছ্বাস কেবল প্রবাসে থাকা আরেকজন লেখকই কেবল উপলব্ধি করতে পারবেন।