অস্ট্রেলিয়ার বসন্ত উৎসব ফ্লোরিয়াড

Looks like you've blocked notifications!

‘আকাশে বইছে প্রেম নয়নে লেগেছে নেশা, কোকিলের কুহু তান মনের গোপনে বেজে ওঠে- বসন্ত এসে গেছে’। টিউলিপের নেশা মেখে, বাসনার রঙে মিশে অজিরা বরণ করে বসন্তকে-যার নাম ফ্লোরিয়াড। অস্ট্রোলিয়ার সবচেয়ে বড় বসন্ত উৎসব এটি। প্রতিবছর রাজধানী ক্যানবেরার কমনওয়েলথ পার্ককে রঙিন করে তোলে ফ্লোরিয়াড। আবহাওয়া বেশ ভালো থাকার কারণে এ বছর ফ্লোরিয়াডে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে দর্শনার্থীরা বসন্ত উদযাপন করতে আসেন এখানে। সিডনি থেকে আসা একজন পুরুষ দর্শনার্থী জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতা। বললেন, ‘ফ্লোরিয়াড আয়োজনটি দারুণ। এটি সকল বয়সের জন্য ভীষণ উপভোগ্য। ফুলগুলো দেখে মন ভরে যায়। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করা যায়।’ ফ্লোরিয়াডে প্রবেশ করতে কোনো ডলার লাগে না।

এক কিশোর দর্শনার্থী জানায়, সে প্রতিবছরই ফ্লোরিয়াডে আসেন এবং এর জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। যেন এখানে এসে সে মজার মজার জিনিস কিনতে পারে আর ফুলের সৌন্দর্যও অনুভব করতে পারে। সে আরো জানায়, ফ্লোরিয়াডের সবকিছুই ভীষণ সুন্দর। ২০১৫ সালের ফ্লোরিয়াডের বিষয়বস্তু ‘রিফ্লেকশন’ অর্থাৎ নিজেকে প্রতিফলিত হতে দেখুন। ফ্লোরিয়াডে এসে দর্শনার্থীরা দক্ষ মালীদের কাছে বাগানের টিপস নিতে পারেন। এ ছাড়া বন্ধু, পরিজনকে নিয়ে মজার মজার খাবার খেতে পারেন। শিশুদের জন্যও এখানে রয়েছে নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা। পুরো ফ্লোরিয়াড ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে রেলগাড়ি; খেলার জন্য আছে স্লাইডসহ বিভিন্ন রাইড এবং পর্যবেক্ষণ চাকা (নাগরদোলা/ অবজারভেশন হুইল) শিশুদের ব্যস্ত রাখতে পারেন ছবি আঁকাতেও।

একমাস অব্দি চলে ফ্লোরিয়াড। পুরো উৎসবের চারটি সপ্তাহকে গল্প, গৌরব, শেকড় ও ঐকতান-এই চারটি বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে। যেন প্রতিটি সপ্তাহেই দর্শনার্থীরা নতুন কিছু দেখতে পায়।

ফ্লোরিয়াড একটি নির্মল আনন্দের আয়োজন। প্রতিবারই এটি সফল আয়োজনের পরিণতি লাভ করে। ফ্লোরিয়াডকে সফল করার পেছনে যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতা রয়েছে তাঁরা হলেন মালী, অপারেশন টিম ও মাটি বিজ্ঞানী। সবার মিলেমিলে কাজ করার প্রবণতা ফ্লোরিয়াডকে আরো সুন্দর করেছে। ফ্লোরিয়াড ২০১৫-এর ইভেন্ট ম্যানেজার জ্যাসন রোজ জানালেন, এবারের ফ্লোরিয়াড ভীষণ ভালো ছিল। দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। গড়ে ১৫ হাজার দর্শনার্থী এখানে আসে। যা কিনা কখনো কখনো সর্বোচ্চ ৩৫ হাজারেও ওঠে। তবে এ বছর গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার দর্শনার্থী আসছে।

তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কীভাবে তাঁরা ফুলগুলোর যত্ন নেন? উত্তরে রোজ জানান, মালীরা প্রতিদিন এখানেই থাকেন। তাঁরা ফুলগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দেন। ফ্লোরিয়াডের জন্য বিজ্ঞানীদের দিয়ে পরীক্ষা করে বিশেষভাবে পটিং মিক্স তৈরি করা হয়, যার ওপর ফুলগুলো এক মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে। তবে এ জন্য দক্ষ মালীরা ছয় মাস আগে কাজ শুরু করেন, যেন এক মাস পর্যন্ত ফুলগুলো তাদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারে।

জ্যাসনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এত সুন্দর আয়োজন ব্যবস্থাপনা করেন কীভাবে ?

তিনি জানান, ‘আমাদের একটি অপারেশনাল টিম আছে, যারা অবকাঠামোগত দিকটি দেখাশোনা করে। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা পর্যবেক্ষণ করাও তাদের দায়িত্ব।’

বসন্তের ছোঁয়া লাগুক সবার প্রাণে। ফ্লোরিয়াডে এসে নিজের প্রতিফলন দেখুন। আর আবিষ্কার করুন অস্ট্রোলিয়ার ঘরের গল্প; যেখানে লুকিয়ে আছে অজানা, অদেখা আকর্ষণের রত্নভাণ্ডার; যা আপনাকে মোহিত করবে। আসুন, ফুলের সৌন্দর্য দেখুন আর অনাবিল আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরুন।