মালয়েশিয়ায় পুরষ্কৃত হলেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী

Looks like you've blocked notifications!

মালয়েশিয়ায় বেস্ট এন্টারপ্রেনিউরশিপ প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৫ পেয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. শফিকুজ্জামান সিদ্দিকী। দুধ, দুগ্ধজাত ও খাদ্যে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে ফরমালিন এবং ৩০ সেকেন্ডে মেলামিন শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন।

মাইক্রোইলেকট্রড পোর্টেবল ডিভাইস নামের এই ফরমালিন ও মেলামিন শনাক্ত করার যন্ত্রটি এরই মধ্যে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে।

চলতি সপ্তাহে কুয়ালালামপুরের রয়েল চুলান হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ড. শফিকুজ্জামান সিদ্দিকীকে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। স্বীকৃতি স্মারক ও পুরস্কার তুলে দেন মালয়েশিয়ার হায়ার এডুকেশন মিনিস্টার দাতু শেরি ইদ্রিস বিন জোসহ।

মাইক্রোইলেকট্রড পোর্টেবল ডিভাইস নামের এই ফরমালিন ও মেলামিন শনাক্ত করার যন্ত্রটি বাজারে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে মালয়েশিয়ার পুন-বি (PUN-B) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

২০১৬ সালের মধ্যে যন্ত্রটি বাজারে আসবে বলে জানান তিনি। মালয়েশিয়ার গভর্নমেন্ট সায়েন্স ফান্ড এই প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে। ড. সিদ্দিকীর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তাঁরই ছাত্রী রুবি আলিশা আলাওনি।

ড. শফিকুজ্জামান সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত ফরমালিন ও মেলামিন শনাক্ত করণ যন্ত্রটি প্রথম অবস্থায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফুড সিকিউরিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহার করা হবে। যাতে এর সুফল সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়। পরবর্তীকালে তা সরাসরি ভোক্তার কাছে  পৌঁছানো হবে।’

এর আগে ড. সিদ্দিকী টেকসই কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখায় জাপানের টোকিও থেকে ‘প্রসপার ডটনেট-স্কোপাস ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া একটি আবিষ্কার স্বত্ব (পেটেন্ট) এবং ১৩টি গবেষণা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। গবেষণাভিত্তিক তাঁর কিছু প্রকাশনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে মালয়েশিয়ার পুত্রা ইউনিভার্সিটি থেকে বর্ষসেরা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হিসেবে ‘বেস্ট পোস্টগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড-২০১১’ পান ড. শফিকুজ্জামান। এ ছাড়া ২০১২ ও ২০১৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বার্ষিক প্রশংসনীয় সেবা পুরস্কার পান।

২০০৮ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব পুত্রা মালয়েশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সাবাহর গবেষণা ও আবিষ্কার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক পান তিনি।

ড. শফিকুজ্জামান বর্তমানে মালয়েশিয়ার সাবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। তিনি মলিকিউলার মাইক্রোবায়োলজিতে মাস্টার্স এবং ইলেকট্রোকেমিক্যাল বায়োসেন্স বিষয়ের ওপর ইউনিভার্সিটি পুত্রা, মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।

১৯৭৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পাবনার সাঁথিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ড. শফিকুজ্জামান সিদ্দিকী। ১৯৯১ সালে নাড়িয়া গদাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৯৮ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সাবাহর বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োসেন্সর রিসার্চ গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা পাম ওয়েল থেকে বায়োফার্টিলাইজার উৎপাদনসহ বিভিন্ন গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ড. শফিকুজ্জামান সিদ্দিকী বায়োপ্রসপেক্টিং, বায়োমাস কনভারসন এবং বায়োটেকনোলজিসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রেও কাজ করে চলেছেন।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন জার্নালে ড. শফিকুজ্জামানের ৪৫টিরও বেশি পেপারসহ দুটি বই রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় তাঁর অবদান নিয়ে মালয়েশিয়ার চ্যানেল টিভি-১ ও টিভি-২ এবং বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।