কবি মুকুলকে যোগ্য সম্মান দিয়েছে বাংলাদেশ!

Looks like you've blocked notifications!

২০১১ সালে দ্বিতীবারের মতো নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে আসি। বিভিন্ন কোম্পানির স্বদেশি ভাইদের সঙ্গেই থাকতে হলো এক রুমে। কাজের ফাঁকে দেশ থেকে নিয়ে আসা বইগুলো একেক করে পড়ছিলাম।

কয়েকদিন যেতেই পাশের বেডে থাকা দ্বীন মোহাম্মদ নামে এক ভাই একটি বই বের করে দিলেন। বইটির নাম ‘দুঃখের সীমানায় সুখ’। এটি একটি উপন্যাস, লিখেছেন মুকুল হোসেন। তিনি আরো জানালেন, ছেলেটা তাঁদের সহকর্মী। আরো বললেন, মুকুল খুব ভালো কবিতা লেখেন, গান লিখে তাতে নিজেই সুর করেন।

আমি কিছুটা অবাক হলাম, এই যুদ্ধের জীবনেও সাহিত্য চলে! কিছুদিন পর মুকুলের লেখা ‘অপূর্ণ বাসনা’ কবিতার বইটিও পেলাম।

এরপর কবি মুকুলের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জমেছে, জমেই যাচ্ছে। এই মাসেই প্রকাশিত হয়েছে কবি মুকুলের ‘আমি প্রবাসী’ বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ ‘মি মাইগ্রেন্ট’। বইটি অনুবাদ করেছেন সিঙ্গাপুরের খ্যাতিমান কবি সিরিল ওং, প্রকাশ করেছে স্বনামধন্য প্রকাশনী এথোস বুক। আরো জানা যায়, ১৯৯৭ থেকে এপর্যন্ত প্রকাশিত এটিই প্রথম কোনো বিদেশি লেখকের বই। বাংলাদেশে নামে-বেনামে অসংখ্য প্রকাশনীর ভিড়ে অর্থ খরচ করেই বেশির ভাগ নবীন লেখকদের বই প্রকাশ করতে হয়, কবি মুকুলের প্রথম দুটি বই প্রকাশ হয়েছে সেভাবেই। কিন্তু এবারের বইটি সিঙ্গাপুরের প্রকাশনী প্রকাশ করে তাকে গ্রন্থস্বত্ব বাবদ প্রথম খণ্ডে সম্মানী দিয়েছে ৫০০ সিঙ্গাপুরি ডলার। কাজের ফাঁকে সিমেন্ট ব্যাগের কাগজে শব্দেরা জমা হয়ে কবিতার বইয়ে স্থান পায়, এই শব্দ যেন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা এক লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর কথা নয়, সমগ্র শ্রমজীবী প্রবাসীর কথা। এবারের শ্রমিক সংহতি দিবসে ‘মি মাইগ্রেন্ট’ বইটির মোড়ক উন্মোচন হয় সিঙ্গাপুরের পুরোনো সংসদ ভবনে, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহাবুব-উজ-জামান।

বলা চলে, সেদিনই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই প্রতিনিধির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি মুকুলকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

আমরা যারা প্রবাসে শখের সাংবাদিকতা করি, তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা ছিল খবরটি স্বদেশের পত্রিকায় তুলে ধরার। বিদেশের মাটিতে স্বদেশির এমন একটি সাফল্য অথচ বাংলাদেশের আপামর জনতা জানল না। এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক ছিল।

সিঙ্গাপুরের অন্যতম পত্রিকাগুলো মুকুলকে নিয়ে প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখেই যাচ্ছে। কবি মুকুল সিঙ্গাপুরের চ্যানেল ফাইভের একটি লাইভ অনুষ্ঠানেও সম্প্রতি অংশগ্রহণ করেছেন। সিঙ্গাপুরের বেশ কিছু সাহিত্যধারার অনুষ্ঠানে ব্যক্ত করেছেন অভিব্যক্তি। আসছে ২৮ মে সিঙ্গাপুর জাতীয় কবিতা উৎসবে আবৃত্তি করবেন স্বরচিত কবিতা।

মুকুলের এই সাফল্যকে বাংলাদেশ কীভাবে দেখছে, কীভাবে নিচ্ছে সেটা জানার প্রয়োজন ছিল, যেহেতু বাংলার আলো-বাতাসেই তিনি বেড়ে উঠেছেন, কবিতাগুলোও লিখেছেন বাংলাতেই।

অবশেষে ২৪ মে দিনটি হলো একটু ব্যতিক্রম, আগের দিন সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল মুকুলকে নিয়ে আরো একটি প্রতিবেদন, সেই প্রতিবেদন অনুসরণ করে নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের গণমাধ্যম মুকুলকে নিয়ে বাংলায় ইংরেজিতে লিখতে শুরু করল।

এনটিভি অনলাইন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, যায়যায়দিন, মানবজমিনসহ বেশকিছু পত্রিকায় লেখা হলো তাঁর সাফল্য নিয়ে। প্রথম আলো ও মানবজমিনের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হলো তাঁর খবর। স্বদেশ থেকে কবির সঙ্গে যোগাযোগ করল দেশের গণমাধ্যম, যোগাযোগ করল দেশে বসবাস করা কবির বাবা-মায়ের সঙ্গে।

আর আমার মনে হলো, কবি মুকুলকে রাষ্ট্রদূতের মূল্যায়নের সঙ্গে এক হয়ে  মূল্যায়ন করতে যাচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশ। রাষ্ট্রদূত এই সাফল্যকে নিজের গর্ব বললেও আজ যেন এই সাফল্যকে গর্ব হিসেবে দেখছে সমগ্র বাংলাদেশ।