মসজিদে মসজিদে শবে কদরের নামাজ, খতমে তারাবিতে বিশেষ প্রার্থনা

বিশেষ ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত শবে কদর। এই রাত উপলক্ষে রাজধানীর মসজিদে মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ শেষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, এশার আজানের পর থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় বেশি। অনেক এলাকায় মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে উপচে পড়া ভিড় ছিল মুসল্লিদের। অনেকে দূর দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে এসেছেন এখানে। এমনই একজন নারিন্দার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন বলেন, প্রতি কদরেই বায়তুল মোকাররমে এসে পড়েন তিনি। একা না, এলাকার পরিচিত প্রতিবেশী এবং আশপাশের আত্মীয় স্বজন সবাই মাগরিবের নামাজ শেষ করেই কদরের রাতের নামাজের জন্য এখানে আসেন।
শবে কদর শব্দটি মূলত বাংলা ভাষায় এসেছে ফারসি থেকে। আরবি শব্দ লাইলাতুল কদরের নানা মহিমা কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে। শব বলতে মূলত রাত আর কদর বলতে ভাবমর্যাদা পূর্ণ বা সম্মানিত বোঝানো হয়। সে হিসেবে শবে কদর মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে ভাবমর্যাদা পূর্ণ রাত হিসেবে পালিত হয়।
যদিও কোরআন এবং হাদিসে শবে কদরকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখে বেধে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, রমজানের শেষ দশ দিন যেকোনো বেজোড় রাতই হতে পারে শবে কদর। তবে উপমহাদেশের অনেক আলেমের মতে, ২৬ রমজান দিবাগত রাতকে কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে আলাদা মর্যাদায় পালন করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে যেসব মসজিদে খতমে তারাবির পড়ানো হয়, সেখানে কদরের রাতকে উদ্দেশ্য করেই সারা মাসে নামাজে পড়া কিরাআতের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াতের খতম দেওয়া হয় কদরের রাতে। এতে করে একদিকে কোরআন খতম অন্যদিকে কদরের রাত-দুই মর্যাদাই মুসলমানরা লাভ করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে উত্তর বাড্ডা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা আজহারউদ্দীন বলেন, শহরের মানুষের আলাদা করে কোরআন পড়া কিংবা শোনার সময় হয় না। এজন্য অনেকেই কোরআন খতমের বড় একটি মাধ্যম হিসেবে খতমে তারাবিকে বেছে নেন। কদরের রাতে কোরআন খতমের পাশাপাশি যারা কোরআন পড়িয়েছেন সেইসব হাফেজদেরকেও আলাদা করে হাদিয়া দেওয়া হয়। মূলত গোটা রমজানের পূর্ণতা আসে এই কদরের রাতকে কেন্দ্র করেই।
মাওলানা আজহারউদ্দীন আরও বলেন, এশা এবং তারাবির পর কদরের রাতের জন্য আলাদা করে কোনো নামাজ না থাকলেও মুসল্লিরা সারারাত নফল নামাজ এবং জিকির-আজকারের মাধ্যমে ইবাদত করেন। কেননা রমজানে নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান। এ ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে কাটে এই রাত। শেষ রাতে মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ মোনাজাতের। আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি এবং পাপের ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি দেশ-জাতি এবং সামস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।
কদরের রাতকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রিও অনেক বেড়ে যায় বলে জানান বিক্রেতারা। বিশেষ করে আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক এবং সুরমার মতো সুন্নতি সামগ্রীতে ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে এসব পণ্য বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, সারা বছর আতর-টুপি বিক্রি হলেও কদরের রাতে বিকাল থেকেই মেসওয়াক, সুরমা, তসবিহ বিক্রি বেড়ে যায়। অনেকে আবার নতুন জায়নামাজ কেনেন। মহিমান্বিত এ রাতে তারা নতুন করে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন শুরু করতে উদ্যোমী হন বলে জানান তিনি।
মুসলমানদের জীবনে কদরের রাত আসে ক্ষমার বার্তা নিয়ে। ‘‘আল্লাহুম্মা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি’’ এই দোয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সব মিলিয়ে এই রাত রমজানকে করে তোলে আরও মহিমান্বিত। পাশাপাশি এই রাতের শিক্ষা থেকে একজন মুসলমান নতুন করে ভালো মানুষ হওয়ার যাত্রা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন আলেম-ওলামারা।