পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ সোমবার (৩১ মার্চ)। ২৯ দিন সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় আজ ঈদ উদযাপন করবে।
বাংলাদেশের আকাশে গতকাল রোববার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ উদযাপিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন জানান, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা আজ তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারি বিকল্প ইমাম এবং বাংলাদেশ বেতারের বিশিষ্ট ক্বারী এমদাদুল ইসলাম বিকল্প মোকাব্বির হিসেবে প্রস্তুত থাকবেন। ইমাম বা মোকাব্বিরের অনুপস্থিতিতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
বৈরি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সব আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য নামাজের স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নেবেন।
শাহজাহান মিয়া জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৯টায় ঈদের দ্বিতীয় জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঢাকাবাসীকে প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমরা সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছি, যাতে মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন।’
মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জানান, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। ওজু ও টয়লেটের সুব্যবস্থার জন্য মুসল্লিদের সুবিধায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, জরুরি স্বাস্থ্য সেবার জন্য মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে। সুপেয় পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্র ও আরামদায়ক কার্পেট ও খাওয়ার পানির ব্যবস্থা থাকবে, সেহেতু মুসল্লিদের জায়নামাজ এবং পানি নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য দুটি এবং নির্বিঘ্নে বাহির হওয়ার জন্য পাঁচটি গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মহিলাদের প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি গেট থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘ্ন চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বছর ঢাকা মহানগরীতে ১১১টি ঈদগাহে ও এক হাজার ৫৭৭টি মসজিদসহ মোট এক হাজার ৭৩৯টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও ঢাকার অন্যান্য সব স্থানে অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাতের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, পুরো জাতীয় ঈদগাহ মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির বম্ব স্কোয়াড, সোয়াট ও ক্যানাইন (কে-৯) ইউনিট।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোষ্টে প্রদর্শন করা হবে। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে-সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং শেষ ঈদ জামাত পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সকাল ৭টায় প্রথম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের প্রধান খাদেম মো. নাসিরউল্লাহ।
সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. আলাউদ্দীন।
সকাল পৌনে ১১টায় পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন। ওই ৫টি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা মো. জাকির হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের বাণিজ্য মেলার পুরনো মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
সকাল সাড়ে ৮টায় এই মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নারীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ডিএনসিসির উদ্যোগে ঢাকা উত্তরের প্রধান ঈদের জামাত এটি। ঈদের জামাতের পর থাকছে ঈদ আনন্দ মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঈদ মেলা।
এই ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন ক্বারি গোলাম মোস্তফা। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী।
ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য থাকবে কার্পেট ও নামাজের বিছানা। প্যান্ডেলের ভেতরে দক্ষিণ পাশে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
মাঠে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন অংশে ছয়টি ফটক থাকবে। ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের সদস্যরা। প্যান্ডেলের দুই পাশে একসঙ্গে ১০০ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারীর অজু করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পানির ট্যাংক রাখা হবে। ঈদের জামাতের জন্য মোট ১২ পেয়ার সাউন্ড সিস্টেম ও ১০০টি মাইক ব্যবহার করা হবে।