ডিএসইতে নিম্ন সূচক রেকর্ড
বিক্রির চাপে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ বুধবার (১৩ মার্চ)। গত ৩৩ মাস ১৮ দিনের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। কমেছে বাজারে মূলধন পরিমাণ।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেন শুরুতে শেয়ার কেনার চাপ ছিল। এতে শুরুটা সূচক উত্থান শুরু হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম ৩ মিনিটে সূচক ডিএসইএক্স উত্থান হয় ৮ পয়েন্ট। সেই সময় ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করেছিল ছয় হাজার ১৭ পয়েন্টে। পরে সূচক কমা মুখিতে ফিরে। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স পতন ৩২ পয়েন্ট। দরপতন ২২২ কোম্পানির শেয়ার ।
এদিক, ডিএসই দিনের শুরুটা সূচক উত্থান থাকলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে তা পতন ফিরে। এতে ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক গত ৩৩ মাস ১৮ দিনের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। এতে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ফোর্সড সেল না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আরও পতন হবে, এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয়ে যেন কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রয় করে। তাই এমন অবস্থায় বুঝে, শুনে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার লেনদেন ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৩২ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৩২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯৭৪ দশমিক ১০ পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ২৫ মে ডিএসইএক্স সূচক পাঁচ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে নেমেছিল।
এদিন ডিএসইএস সূচক ৯ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩০০ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস ৩০ সূচক সাত দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৬ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ১১২টির ও কমেছে ২২২টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৬০টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি সাত লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং সিরামিকের ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, গোল্ডেন সনের ২০ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, এসএস স্টিলের ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, গ্রামীণফোনের ১১ কোটি দুই লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ১১ কোটি এক লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং মুন্নু ফেব্রিকসের ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেন ও বাজারে মূলধনের পরিমাণও।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিএসইতে লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক উত্থান হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম ৯ মিনিটে প্রধান সূচক সিএএসপিআই উত্থান ২০ পয়েন্ট। সেই সময় সিএএসপিআই সূচক অবস্থান করেছিল ১৭ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে। পরে সেই সূচক পতনে অবস্থান নেয়। লেনদেন শেষে প্রধান সূচক সিএএসপিআই পতন ১৫৭ পয়েন্ট। দরপতন ১৩৩ কোম্পানির শেয়ারে।
সিএসইতে বুধবার ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ২৬ হাজার ২৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৩২ হাজার ৭৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫৭ দশমিক ৮২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১০৫ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক ১২ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৭৭ দশমিক শূন্য তিন পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯৪ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১০ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৬০টির এবং কমেছে ১৩১টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ২৬টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে খান ব্রাদার্সের ৮৯ লাখ টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ৭৫ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬২ লাখ টাকা, এসএস স্টিলের ৫৩ লাখ টাকা, নাভানা ফার্মার ৫০ লাখ টাকা, বেস্ট হোল্ডিংসের ৪১ লাখ টাকা, পূবালী ব্যাংকের ৪০ লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৪০ লাখ টাকা এবং ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।