দর বৃদ্ধির শীর্ষে অগ্নি সিস্টেমস, খতিয়ে দেখার নির্দেশ বিএসইসির
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অগ্নি সিস্টেমস গত সপ্তাহে (৬ থেকে ৯ অক্টোবর) শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে। অবশ্য কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো লঙ্ঘন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ডিএসইতে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৪১ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ছিল ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে সাত টাকা ৭০ পয়সা বা ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে চার কর্মদিবসে কোম্পানিটির ১০৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা মোট লেনদেনের সাত দশমিক শূন্য চার শতাংশ। এই পরিমাণ শেয়ার কেনাাবচা করে কোম্পানিটি লেনদেন শীর্ষে অবস্থান করেছে, যেখানে সপ্তাহটিতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানিতে এক হাজার ৪৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোন লঙ্ঘন আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে ডিএসই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ তদন্ত করতে সম্প্রতি নোটিশ পাঠিয়েছি ডিএসইকে। একইসঙ্গে ডিএসইকে অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ার দর বাড়ার তদন্ত করে সেই প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এখন তদন্ত আসা পর্ষন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তদন্তে যদি শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোম্পানিটির কোন অনিয়ম পাওয়া যায়, তবে সেই ক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে সরকার গঠন করা হয়। সেদিন অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩১ টাকা ২০ পয়সা। যেখানে ৯ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৪১ টাকা ২০ পয়সা। এই সময়ের ব্যবধানে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছিল ১০ টাকা বা ৩২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। কিন্তু গত তিন মাসে (গত ১৫ জুলাই থেকে ৯ অক্টোবর পষন্ত) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছিল ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। অবশ্য এর মধ্যে সবশেষ চার কর্মদিবসেই (৬ থেকে ৯ অক্টোবর) কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছিল ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ারের দর বৃদ্ধি কারণ ডিএসইকে খতিয়ে দেখার নির্দেশটি ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিল বিএসইসি। যা ডিএসইকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি। চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ও লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এটির পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ আছে কি না, সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি সময়ে কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারসাজি বা অনৈতিক কোনো লেনদেনের ঘটনা ঘটছে কি না, সেটিও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
শেয়ার দর বৃদ্ধি কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ প্রসঙ্গে কোম্পানির সচিব আল হেলাল মো. মওদুদ আহমেদ জানান, গত বুধবার পর্যন্ত ডিএসই কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে এই ব্যপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। পূজার কারণে এখন অফিস বন্ধ। শেয়ার দর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা শেয়ার কেনাবেচা করি না। যারা শেয়ার কিনছে, তারাই বলতে পারবে কেন শেয়ার কিনছেন। তবে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে অগ্নি সিস্টেমসের শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, অগ্নি সিস্টেমসের গত অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৩২ পয়সা। গত তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৯০ পয়সা। আলোচিত তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে এক টাকা ১৫ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৩৭ পয়সা। ২০২২-২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-মার্চ) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য চার দশমিক ৭০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছিল এক টাকা ১৩ পয়সা। সমাপ্ত বছরে শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল এক টাকা ৩৮ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা।
২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় অগ্নি সিস্টেমস। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭২ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা সাত কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৯২টি। রিজার্ভে রয়েছে ১৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।