অনিরাপদ তবুও সেরার তালিকায় ওরিয়ন ইনফিউশন
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের ৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে গত সপ্তায় (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার), যা মোট লেনদেনের সাত দশমিক শূন্য তিন শতাংশ একাই করেছে কোম্পানিটি। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে। অপরদিক সপ্তাহটিতে শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৭ টাকা। যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ৫৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়িয়েছে ১৯৬ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। এই পিই রেশিও হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ অনিরাপদ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৪২৪ টাকা ৮০ পয়সা। আগের সপ্তাহের ১৯ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৩৯৭ টাকা ৮০ পয়সা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৭ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে ডিএসইর বাজারে মূলধন বেড়েছে ৫৪ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ টাকা।
গেল সপ্তাহে ৩৯৬টি কোম্পানির এক হাজার ১৭৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সেখানে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির ৮২ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের সাত দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার অডিটেড সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়ায় ১৯৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ নিরাপদে নেই।
পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসোবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। মানে পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যতো বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা ততো বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ওরিয়ন ইনফিউশনের চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৫৪ পয়সা। আলোচিত প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ২০ পয়সা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯৯ পয়সা। এর আগের ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ডিসেম্বর, বিকেল ৩টায়। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ছিল ৪ ডিসেম্বর। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল দুই টাকা আট পয়সা। সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল দুই টাকা ৮২ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ১৫ টাকা ৪৫ পয়সা।
১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওরিয়ন ইনফিউশন। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা দুই কোটি তিন লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০টি। রিজার্ভে রয়েছে আট কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে পাঁচ দশমিক ২১ শতাংশ, বিদেশিদের দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৪ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুনে কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৩৫ লাখ ৭৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।