কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের দর
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গত সাত কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এই কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বেড়েছে ২৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শেয়ারটির দর এতো বৃদ্ধির বিষয়টি ইতোমধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোরব) প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৭৭ টাকা ৬০ পয়সা। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেয়ার দর ছিল ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা। সাত কর্মদিবস ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়ায় ৬১১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪ টাকা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাজারে মূলধন ছিল ৪৭০ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৪ টাকা। এসময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১৪১ কোটি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪০ টাকা।
ইতোমধ্যে শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, কারণ নেই তবুও শেয়ারটির দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একটি চক্র কারসাজি করে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়িয়েছে। এতে মাত্র সাত কর্মদিবস ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩০ শতাংশ। বাজার মূলধন বেড়েছে ১৪১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কোম্পানিটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কেন প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারটির দর বাড়ছে, সেটা বলতে পারছি না। শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
অপরদিক শেয়ার দর এইভাবে বাড়ার কারণে গত ৬ অক্টোবর কোম্পানিটিতে ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে গত ৮ অক্টোবর কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। এই ধরনের দর বাড়ায় এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুরেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন বিনিয়োগকারীরা।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে (২০২৫ সাল) দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ২৭ পয়সা। আগের বছরের (২০২৪ সাল) একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল এক টাকা ২৪ পয়সা। কোম্পানিটির চলতি বছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে দুই টাকা ৩৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল দুই টাকা ৩০ পয়সা। ওই দুই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে নেগেটিভ ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল এক টাকা ৩৭ পয়সা। গত ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
এর আগে ২০২৪ সমাপ্ত বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ নগদ ও সাত শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ওই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল পাঁচ টাকা ৬১ পয়সা। ওই সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল তিন টাকা ৩৫ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ৫৭ টাকা ৫৮ পয়সা।
১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রগতি ইন্স্যুরেন্স। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৮ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা সাত কোটি ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬টি। রিজার্ভ রয়েছে ৩৫৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান