অচিরেই তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান : জাহিদ ফারুক

Looks like you've blocked notifications!
সচিবালয়ে আজ সোমবার গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। ছবি : এনটিভি

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছন, আমরা হয়তো অচিরেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারটি সমাধান করতে পারব।

আজ সোমবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিস্তা চুক্তির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে জাহিদ ফারুক বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আমরা আগে চেষ্টা করেছিলাম। কাজটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। এটার স্টাডি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। কোন কোম্পানি কাজটা করবে সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনার পর একটা দিকনির্দেশনা দিলে সেই বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, দুবছর আগে আমি যখন হাঙ্গেরি গিয়েছিলাম তখন ভারতের জলশক্তিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আসার পর আমি তাকে কয়েকবার পত্র দিয়েছি। আমি তাকে বাংলাদেশে আসার জন্য দাওয়াত দিয়েছি। আমি বলেছি, আসেন আমরা আলোচনা করি। উনি হয়তো একটা সময় দেখে আসবেন।'

প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিস্তাটা নিয়ে আমরা নিজেরাই উদ্বিগ্ন। এই চুক্তিটি আমরা করতে চাই। ধীরগতিতে হলেও কাজ আগাচ্ছে। আপনারা জানেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কারণে কাজটি স্লো হয়ে গেছে। আমরা হয়তো অচিরেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারটি সমাধান করতে পারব।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, নদী ভাঙনের বিভিন্ন কারণ আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ বালি উত্তোলন। এই ব্যবসা এখন অনেক রমরমা। রাতের অন্ধকারে নদীর কিনারা থেকে বালি উঠায়। এরকম হলে লোহা দিয়ে বাঁধ দিলেও কিন্তু বাঁধ থাকবে না, এটা আমি বলেছি।

তিনি জানান, আমরা বালি উঠানো বন্ধ করতে চাচ্ছি না কিন্তু নির্দেশনা দিচ্ছি, যেখান থেকে উঠানোর কথা বলছি; যাতে সেখান থেকেই উঠানো হয়। বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমরা একটা নীতিমালা করছি, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে। নীতিমালায় আমরা বলেছি, বালি সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে। যাতে জনগণ দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আমরা চাই বালি যাতে রাতে উত্তোলন না হয়।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বালুমহাল আছে, জেলা প্রশাসন এসব বালুমহাল ইজারা দেয়। জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা আছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বালুমহাল ঘোষণা করতে হবে। তারা সেখান থেকে বালি উঠাতে পারবে। তবে বালি উঠানো আমরা বন্ধ করতে পারবো না। বালি উঠানো বন্ধ করলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে, বালির দাম বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমরা যেখান থেকে বলব সেখান থেকে আপনারা বালি উত্তোলন করেন। কিন্তু এরা কী রাতের অন্ধকারে নদীর কিনারা থেকে বালু উত্তোলন করে। যেখান থেকে বালি উঠায় সেখানে ব্লক থাকে, মাটির বাঁধ থাকে। আমি বলেছি সেখানে যদি লোহা দিয়ে বাঁধ দিই, সেই বাঁধও টিকবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১৭ হাজার কিলোমিটার বাঁধ আমরা নির্মাণ করেছি। অতীতে যারা এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা ভাঙন এলাকায় কম গেছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় নিজেই গিয়েছি ও দেখেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক একজন ঠিকাদার ৫০ থেকে ৭০টি কাজ নিয়ে বসে আছেন। সে কাজগুলো তারা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছে না। এই ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে ১১ জন ঠিকাদার ছিল। অনেক বড় বড় ঠিকাদার ছিল। এক একজন ডিপিএমে (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) ৩০০/৪০০ কোটি টাকার কাজ পেতো। আমরা একটি কাজও ডিপিএমে দেইনি। আমরা বলেছি, এই ১১ জন ঠিকাদার কাজ শেষ না করা পর্যন্ত নতুন করে কোন কাজ পাবে না। কাজগুলো শেষ করার পর সেই পুরনো ১১ জনকে এখন আমরা কাজ দিচ্ছি। এখন নির্দেশনা হচ্ছে, একজন ঠিকাদার তিনটির বেশি কাজ করতে পারবে না।

বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো নদ-নদীর সংখ্যা বের করতে পারিনি। তবে অফিসিয়ালি আমরা বলি বাংলাদেশে ৪০৫ টি নদী প্রবাহিত হয়ে থাকে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।