অনুদানের ঘর দেওয়ার নামে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিল বিপুল অংকের টাকা!

Looks like you've blocked notifications!

অনুদানের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। কখনওবা প্রধানমন্ত্রীর উপহার আবার কখনও বা এনজিওর অনুদানের কথা বলে গ্রামের সহজ সরল গরিব মানুষের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রায় চার বছর ধরে টাকা প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতারিতরা। তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি। প্রতারকচক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউই কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস পায় না। ঘটনাটি খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের। এদিকে জেলা প্রশাসন বিষটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আর ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানা যায়, জেলার তেরখাদা গ্রামের কালিপদ বালার ছেলে বিশঙ্ক বালা এবং সুনীল বালার মেয়ে হীরা বালা বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে অনুদানের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার সময় তাদের বলা হয়েছিল এই টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বা এনজিওর অনুদানের পাকা ঘর দেওয়া হবে। প্রথমদিকে ঘর প্রত্যাশীরা টাকা দিতে শংকা বোধ করলেও বিশঙ্ক বালার ভাই শংকর বালা এবং হীরা বালার বাবা সুনীল বালার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ঘর প্রত্যাশিরা টাকা দেন। সুনীল বালা, শংকর বালা, বিশঙ্ক বালা ও হীরা বালা একই পরিবারের সদস্য।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ১৪ জন নারী-পুরুষের কাছ থেকে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ২২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রদীপ রায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, গুরুদাস মজুমদারের কাছ থেকে ২২ হাজার, বিষ্ণুপদ বিশ্বাসের কাছ থেকে ২৫ হাজার, কিশোর মল্লিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার, কানন গাইনের কাছ থেকে ৫৮ হাজার, মনিলা মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, গোপাল বালার কাছ থেকে ২২ হাজার, সুতিসনা বসুর কাছ থেকে ৪০ হাজার, স্বপন বিশ্বাসের কাছ থেকে ২৫ হাজার, কালিদাসি মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, সুব্রত মজুমদারের কাছ থেকে ২৫ হাজার, প্রদীপ রায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, রমলা মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, বিচরণ বালার কাছ থেকে ২২ হাজার এবং রবিদাসী গাইনের কাছ থেকে ২২ হাজর টাকা নেওয়া হয়েছে। চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে কিশোর মল্লিক জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার সময় বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের পাকা ঘর করে দেওয়া হবে। তিনি বিশঙ্ক বা হীরার কথায় টাকা দিতে রাজি না থাকায় সুনীল বালা ও শংকর বালার আশ্বাসের পর টাকা দেন। কিশোর জানান, প্রায় ৫ বছর হয়ে গেল এখনও টাকা ফেরত পাইনি। কোনো উপায় না দেখে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকের কাছে টাকা ফেরত ও প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছি।

জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগকারীদের অবেদন। ছবি : সংগৃহীত

স্থানীয় আজগড়া ইউপি সদস্য অপূর্ব কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ঘর দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। গত ১২ জুন ভুক্তভোগীদের সাথে আমিও খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে যাই অভিযোগ করতে। আশা করি এবার প্রতারকচক্র শাস্তির আওতায় আসবে এবং ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পাবেন।

এ ব্যাপারে সুনীল বালা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, ঘরের নামে টাকা দিয়ে কিছু মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। তবে তিনি বা তার পরিবারের কেউ জড়িত নন। এই ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।