অস্ত্র মামলায় কাউন্সিলর রাজীব রিমান্ডে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের চার দিন রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব ২০-এর উপপরিদর্শক (এসআই) প্রণয় কুমার প্রামাণিক আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি রাজীবকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সে আবেদনের পরে রাজীবের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে চার দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে বলেন, আসামি রাজীব রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আসামি রাজীব মোহাম্মদপুর থানা এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র-গুলি এবং মাদকের ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলদারির মাধ্যমে এলাকায় অপরাধ জগতের সুলতান হিসেবে আবির্ভূত হন। রাজীবের সহযোগী অন্যান্য ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র-গুলির উৎসস্থল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য, তার কাছে আরো কোনো অস্ত্র, গুলি আছে কি না, তার তথ্য উদ্ধারের জন্য, মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এর আগে রাজধানীর ভাটার থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় রাজীবকে গত ২১ অক্টোবর ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। সে রিমান্ড শেষ হলে তিনি এত দিন কারাগারে আটক ছিলেন।
গত ২০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে কাউন্সিলর রাজীবকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, মদ ও টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র্যাব-১। এর পরে ২১ অক্টোবর রাতেই রাজীবকে ভাটারা থানায় হস্তান্তর করে তারা।
এদিকে গ্রেপ্তারের পরে রাজীবকে তাঁর মোহাম্মদপুরের বাসায় নিয়ে যায় র্যাব। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা পুরো বাসায় চলে র্যাবের তল্লাশি। বাসায় ব্যাপক তল্লাশির পর কাউন্সিলর রাজীবকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসার অদূরেই তাঁর কার্যালয়ে।
সেখানে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অভিযানে থাকা র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তাঁর বাড়িতে ও অফিসে কোনো কিছুই আমরা পাইনি। আমরা যা বুঝতে পেরেছি, বাড়িতে তাঁর আর্থিক লেনদেনের যে ডকুমেন্টগুলো ছিল, চেকবই থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়, এগুলো এরই মধ্যে তিনি সরিয়ে ফেলেছেন। এবং তাঁরই এক স্টাফের আত্মীয়র বাড়ি থেকে চেকবইগুলোর কিছু নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আমরা দেখেছি, ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিনি পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন।’
সারোয়ার আলম আরো বলেন, ‘তিনি আসলে কাউন্সিলর হওয়ার পর পরই ২০১৬ সালে তিনটি কোম্পানি খুলেছেন—সিলিকন, এক্কা ও নাইমা এন্টারপ্রাইজ। এই তিন প্রতিষ্ঠানের নামে আসলে তিনি জমি দখল করেছেন। এ অপরাধগুলো করতে গিয়ে তিনি যে লোকদের ব্যবহার করেছেন, আত্মীয় এবং অনাত্মীয়, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এদিকে ক্যাসিনোর সঙ্গে রাজীবের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে পাশের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর বাসা থেকেও বিপুল টাকা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

আদালত প্রতিবেদক