আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ঘোষণা বিএনপির
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/02/rajshahi-bnp-somabesh-photo-3.jpg)
রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তারা। সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির নেতারা বলেন, এরই মধ্যে রাজপথ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এই আন্দোলনে সবাইকে শামিল হতে হবে। সব রুটের বাস, ছোট ছোট যানবাহন বন্ধ করে, পথে পথে বাধা দিয়েও সরকার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে মানুষকে থামাতে পারেনি। আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। এখন আন্দোলন বেগবান করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা ময়দানসংলগ্ন নাইস কনভেনশন সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন।’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/02/rajshahi-bnp-002.jpg)
সমাবেশে টুকু আরও বলেন, ‘একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যে পুলিশ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করেছে, স্বাধীন দেশে সেই পুলিশ একটি দলের কর্মীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘব-বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে, তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে।’
‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে’ বলেন টুকু।
দেশব্যাপী নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোট চুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।’
পরে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা ছিল। তার বদলে আমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে রাজশাহী আসতে হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ জাতীয় ভোটার দিবস। অথচ মানুষ ভোটই দিতে পারে না। আমরা এমন অবস্থা চাই না। সে কারণে আন্দোলনের আর কোনো বিকল্প নেই।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, রাজশাহী বিভাগীর সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/02/rajshahi-bnp-003.jpg)
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল হক প্রামাণিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা, দেশের ছয়টি সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে আসে। দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দেন। পথে পথে পুলিশ সদস্যরা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের শরীর তল্লাশি করে। সমাবেশকে ঘিরে রাজশাহীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জলকামান, এপিসি যান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি করে গাড়ি।