আমন চাষ নিয়ে বিপাকে তিস্তাপারের কৃষক

Looks like you've blocked notifications!
উজানের ঢলে পানি বাড়ায় তিস্তা ব্যারজের চিত্র। ছবি : এনটিভি

নীলফামারীর কৃষক আনোয়ার হোসেন। জেলার ডিমলা খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে তাঁর বাস। চলতি মৌসুমে দশ বিঘা জমিতে রোপণ করেন আমনের চারা। কিন্তু, হঠাৎ উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে সেই চারা। ফলে, কৃষির ওপর নির্ভরশীল এই মানুষটি পড়েছেন চরম বিপাকে। 

শুধু আনোয়ার নন, জেলার তিস্তাপারের আরও অনেক কৃষকের ভাগ্যও এখন দুর্ভাগ্যের কাতারে। হতাশায় দিন গুনছেন তাঁরা।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নদী কয়েক বিঘা জমি গিলে খেয়েছে। আবাদ নিয়ে অনেক শঙ্কায় থাকতে হয়। কখন যে পানি বাড়ে। পানি বাড়লে ফসল শেষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন হলো। কিন্তু, পানিতে ডুবে থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে চারাগুলো। এগুলো আর স্বাভাবিক হবে না।’

একই এলাকার কিষানি শারমিন নাহার। চার বিঘা জমিতে তিনিও রোপণ করেছেন আমন চারা। কিন্তু, সর্বনাশ হয়েছে তিস্তার পানি বাড়ায়। তিনি বলেন, ‘স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন, আর কিছু জমি আছে, সেগুলো আবাদ করেই সংসার চালাতে হয় আমাদের।’

শারমিন নাহার বলেন, ‘বোরো কাটারর সময় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেলে ধানক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। স্বপ্ন ভেঙে যায় আমাদের। আমরা ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করি আবার ঝুঁকি নিয়ে ফসলও ফলাই। এরমধ্যে যা আসে সেটুকুই আমাদের সম্পদ।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তাপারের জমিগুলোতে এখনও জমে রয়েছে পানি। এই পানিতে তলিয়ে রয়েছে হেক্টর হেক্টর জমিতে সদ্য রোপণ করা আমন চারা। ময়লা জমে থাকায় চারাগুলো হয়ে গেছে ধুসর বর্ণের। এসব চারার ভবিষ্যৎ বেড়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

সম্প্রতি উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেলে প্লাবিত হয় পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, নাউতারাসহ ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ নদীবেষ্টিত আশপাশ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েকশ মানুষ। পানিতে তলিয়ে যায় আমন চারা। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তিস্তাপারের হাজার হাজার কৃষক।

তিস্তার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিস্তাপারে অনেক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করি। কখন পানি আসবে বলা মুশকিল। পানি বাড়লে বিপদ, ঘর থেকে জিনিস পত্র বের করে আনারই সময় পাওয়া যায় না।’

পানিতে তলিয়ে রয়েছে তিস্তাপারের হেক্টর হেক্টর জমিতে সদ্য রোপণ করা আমন চারা। ছবি : এনটিভি

কৃষক আব্দুর রাশেদ বলেন, ‘ভারতের পানির কারণে হামরা ডুবি যাই। পানির যখন বেশি হয়, ঘরবাড়ি ভাঙ্গি নিয়া যায়। কোনো রকমে গরু-ছাগল নিয়ে বাঁধোত ঠাঁই নেই।’

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘আমার এলাকার শত শত কৃষকের আমন চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁরা বিপাকে রয়েছেন। কত খরচ তাদের। কৃষির ওপর নির্ভর করে তাদের চলতে হয়।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘খড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালুর বাঁধটির কিছু অংশ ধসে গেছে। সেটিকে রক্ষা করা দরকার। তাহলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয় যৌথ নদী কমিশন চুক্তি অনুযায়ী। উজান থেকে খবর আসামাত্র আমরা এলাকায় ছড়িয়ে দিই এবং সতর্ক করা হয় এলাকাবাসীকে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদী সংলগ্ন কিছু এলাকা প্লাবিত হয়, কিন্তু আমরা চেষ্টা করি যাতে তাঁরা দ্রুত ম্যাসেজটি পায়।’

অমিতাভ চৌধুরী আরও বলেন, ‘যেসব এলাকায় বাঁধ সংস্কার বা মেরামত প্রয়োজন সেগুলো চিহ্নিত করে আমরা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘তিস্তা এলাকায় দশ হেক্টরের মোতা জমির আমন চারা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমির আমন চারা পানিতে তলিয়ে থাকায় ধুসর বর্ণের হয়ে গেছে। আবারও পানি বৃদ্ধি পেলে পরিষ্কার হবে, আর যদি না হয় তাহলে স্প্রে করতে হবে। তাহলে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখনও অনেক সময় রয়েছে চারা রোপণের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চারা দিয়ে এবং সরকারি সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’