আমরা এখনো মাঠে নামিনি, বিশৃঙ্খলা হলে নামব : ড. হাছান মাহমুদ

Looks like you've blocked notifications!
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মামুদ। ছবি : ফোকাস বাংলা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশ্বচোরের মুখপাত্র দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং তার ভাই ছাড়াও আরও কারা অর্থপাচার করেছে আমাদের জানা আছে, আস্তে আস্তে সেগুলোও আপনারা জানতে পারবেন। আন্দোলনের কথা বলে বিএনপি সারা দেশে সমাবেশের নামে নিজেরাই মারামারি করে। আমরা এখনো মাঠে নামিনি। যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়, আমরা মাঠে নামবো।”

সোমবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটি আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ১৭ই মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার ভাই অর্থপাচারের দায়ে আদালতে দণ্ডিত, যাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন, যাদের আমলে দেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়, তাদের মুখে অর্থপাচার নিয়ে কথা বলার অধিকার নাই।

“যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অর্থপাচারের বিষয়ে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দেয়, তার ভাইয়ের অর্থপাচার সিঙ্গাপুরে উদঘাটিত হয় এবং সেই অর্থ ফেরত আনা হয় ও দুর্নীতির কারণে তারা তো বিশ্বচোর ছাড়া কিছু নয়। বয়সে আমার জ্যেষ্ঠ ফখরুল সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই আমি অপ্রিয় হলেও সত্য একটি কথা বলতে চাই, তিনি সেই বিশ্বচোরের মুখপাত্র। সুতরাং বিশ্বচোরদের মুখপাত্রের কোনো কথা বলার অধিকার নেই।”

বিএনপির কারা অর্থপাচার করেছে তাদের কথা আস্তে আস্তে বের হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যারা এই ধরনের অর্থপাচার করেছে আমরা সেগুলো উদঘাটন করছি, তাদেরকে আইনের আওতায় আনছি এবং সেই কারণেই পি কে হালদার ধরা পড়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং তার ভাই ছাড়াও আরও কারা অর্থপাচার করেছে আমাদের জানা আছে। আস্তে আস্তে সেগুলোও আপনারা জানতে পারবেন। আমরা সেগুলো উদঘাটন করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন এবং এটি অব্যাহত থাকবে।”

সরকারকে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দেওয়াকে বিএনপির অনর্থক অপপ্রচার বলে বর্ণনা করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “শ্রীলঙ্কার উদাহরণ বাংলাদেশকে দিয়ে লাভ নেই। যে দেশ নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে, যে দেশ শ্রীলঙ্কাকে দুইশ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় এবং ফেরত দিতে না পারছে না বিধায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি, সেই দেশ, সেই সরকারকে এই উদাহরণ দেওয়া অনর্থক ও অপপ্রচার।”

মন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনের কথা বলে বিএনপি সারা দেশে সমাবেশের নামে নিজেরাই মারামারি করে। আমরা এখনো মাঠে নামি নাই। যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়, আমরা মাঠে নামবো। যারা উঁচু গলায় বক্তৃতা করেন, কি হলে, কি করলে তারা গর্তে লুকাবেন, সেটা আমরা ভালো করেই জানি।”

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা তুলে ধরে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা যার ধমনিতে শিরায় বঙ্গবন্ধু রক্ত প্রবহমান, যার কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ প্রতিধ্বনি হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রের অগ্নিবীণা, অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠকণ্ঠের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হয়েছিল।

আলোচনা সভায় সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, “১৯৮১ সালের এই দিনে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের আদলে নামেই শুধু বাংলাদেশ। তিনি দেশে ফিরে না এলে অনেক আগেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছেন বলেই বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধির পথে।”

প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, “পঁচাত্তর পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীনরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্যাতন করা হয়েছিল। ভুয়া মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানো হয়। যখন ক্ষমতাদখলকারীরা দেখলো যে আওয়ামী লীগ নেতা নির্ভর দল নয়, কর্মী নির্ভর দল, প্রতিবাদের জোয়ার তৈরি হচ্ছে; তখন তাদের ওপর সামরিক বাহিনী নামিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ কর্মীদের অস্ত্র মামলা দেওয়া হলো। এভাবে প্রচুর আওয়ামী লীগের কর্মীকে, তৃণমূলের কর্মীদের পর্যন্ত জেলে দেওয়া হয়েছিল।

আলোচনা সভায় বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদের কাছে একটি প্রস্ফুটিত ফুল। তিনি দেশে এসে আমাদের জাতিসত্তাকে আলোকিত করেছেন, নিজের সৌরভ, চেতনা ও জ্ঞান দিয়ে আলোকিত করেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে বাংলাদেশের মানুষকে আলোকিত করেছেন, এটা আমাদের গৌরব।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে ও আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক উপ-কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান প্রমুখ।