আলু নিয়ে বিপাকে নীলফামারীর চাষিরা
ভরা মৌসুমে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীর কৃষকরা। উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে রয়েছেন সংশয়ে। যদিও আশার কথা শুনিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ। তাঁরা বলছেন, আলু তোলার অনেক সময় এখনও বাকি আছে। পরে বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা মুছে যায়নি। কৃষকদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
কৃষকরা বলছেন, বিঘা প্রতি আলু উৎপাদনে খরচ অন্তত ১৫ হাজার টাকা। অথচ বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তিন হাজার টাকা।
দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের রশিদুল ইসলাম। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজারদর অনেক খারাপ। কেজি প্রতি সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, খরচই উঠবে না।’
পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বালাপাড়া এলাকার কৃষক জগদীশ রায় বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আলু করতে ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলন দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বাজারদর কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি।’
কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের দুরাকুটি গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আলুর বর্তমান বাজার হিসাবে কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করলে আসে ১২ হাজার টাকার কিছু বেশি। সে হিসেবে প্রতি বিঘায় লোকসান প্রায় তিন হাজার টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, নীলফামারীতে ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চার লাখ ৪৯ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ জেলায় অতিরিক্ত ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ আলুর হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার।
শহরের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন জানান, আলুর এখন ভরা মৌসুম। এ কারণে দাম কম। আমরা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকায় কিনছি। আর বিক্রি করছি ছয় টাকা দরে। তবে মাসখানেক পর আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলু সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘গত বছর এ সময় আলুর বাজার ভালো ছিল। কিন্তু এবার অনেক কম। কৃষকরা তাৎক্ষণিক মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সংরক্ষণের বিষয়টি ভাবেননি। সংরক্ষণ করলে লাভবান হতে পারবেন তাঁরা। এই এলাকায় আরও হিমাগার স্থাপন প্রয়োজন।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপাতত বাজারদর কম, কিন্তু এই অবস্থা থাকবে না। মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের কারণে আলুর ভালো ফলন হয়নি। যেভাবে হোক আলুগুলোকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিতে হবে।’