আল জাজিরার সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনাসদর দপ্তর  

Looks like you've blocked notifications!

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান” শিরোনামে প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সেনাসদর দপ্তর। আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রতিবেদনটি সাজানো এবং দূরভিসন্ধিমূলক। কল্পনাপ্রসূত ও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারিত।

আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক দেশকে অস্থিতিশীল করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার একটি অপপ্রয়াস মাত্র। প্রতিবেদনটি তৈরির কুশীলব হলেন, জনাব ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দণ্ডিত একজন অপরাধী, জনাব জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি ছদ্মনামধারী) মাদকাসক্তির অপরাধে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত একজন ক্যাডেট এবং জনাব তাসনিম খলিল অখ্যাত নেত্র নিউজ-এর প্রধান সম্পাদক।

অসৎ ও কলুষিত চরিত্রের অধিকারী এ সকল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গ পূর্ব থেকেই তাদের নিজেদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সাথে মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে বিচ্যুত ও অশুভ চিন্তাধারার এ সব ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও বোধগম্য নয়। দেশের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কার্যক্রমের ভিডিও ক্লিপ ও ছবি চাতুর্যের সঙ্গে সম্পাদনা এবং অডিও সংযোজন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ইসরায়েল থেকে ইন্টারনেট ও মোবাইল মনিটরিং সরঞ্জামাদি ক্রয় সংক্রান্ত’ মিথ্যা তথ্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরির একটি কোম্পানি থেকে ক্রয়কৃত সিগন্যাল সরঞ্জামাদিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ইসরায়েল থেকে আমদানিকৃত মোবাইল মনিটরিং প্রযুক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ক্রয়কৃত সরঞ্জাম কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো নথিপত্রেই এগুলো ইসরায়েলের তৈরি বলে উল্লেখ নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় উক্ত দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় কিংবা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গ্রহণের কোনো অবকাশ নেই।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদনটিকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভেদ ও দূরত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টির একটি অপপ্রয়াস হিসেবে মনে করে। বর্তমান চেইন অব কমান্ডের অধীনে এই সুশৃঙ্খল বাহিনী দেশের সংবিধান এবং সরকারের প্রতি সর্বদাই অনুগত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সরকারের প্রতি অবিচল শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশ মাতৃকার উন্নয়ন ও সেবায় নিয়োজিত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।”

গতকাল সোমবার “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান” প্রতিবেদন প্রচার করে আল জাজিরা। এর পর প্রতিবেদনটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে আজ সকালে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার করা “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” শিরোনামে একটি মিথ্যা ও মানহানিকর প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত হয়েছে।

প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর সিরিজ ছাড়া আর কিছুই নয়, যা মূলত উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কুখ্যাত ব্যক্তিদের যোগসাজশে তৈরি রাজনৈতিক অপপ্রচার। সংগঠনটি (জামায়াতে ইসলামী) ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে আসছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যার কথা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জামায়াত অপরাধীর ভূমিকায় ছিল। প্রতিবেদনটি আল জাজিরার রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক প্রচারণার প্রতিচ্ছবি। এ ছাড়া প্রতিবেদনটির প্রধান ভাষ্যকার ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান, যাকে মুক্তিযুদ্ধে সরকারি হিসাব মতে মৃত্যুর সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এটি লক্ষ্যণীয়, আল জাজিরার করা অভিযোগের মূল ‘উৎস’ একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরার পক্ষ থেকেই ‘মানসিক রোগী’ বলে দাবি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগসাজশের কোনো প্রমাণও নেই। মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ কোনো ব্যক্তির কথার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পক্ষে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এ ছাড়া এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই যে, জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু পলাতক আসামি ও নিন্দিত ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের সঙ্গে প্রতিবেদনটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী দল ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, উগ্রপন্থি ও তাদের মিত্র—যারা লন্ডন ও অন্য জায়গায় তৎপর, তাদের মাধ্যমে প্ররোচিত এই অপপ্রচার প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রমাণ রয়েছে।

আফসোস এই যে, আল জাজিরা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচারকারীদের ‘দূষিত রাজনৈতিক নকশার উপকরণ’ হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।