আশুগঞ্জ মোকামে আসছে ধান, মেঘনায় ডাকাতের উৎপাত

Looks like you've blocked notifications!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মণ ধান আসছে। ছবি : এনটিভি

দেশের বৃহত্তম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে নতুন ধানের সরবরাহ প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মণ ধান আসছে আশুগঞ্জ মোকামে। তবে পরবর্তী সময়ে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সরবরাহ আরও বৃদ্ধিপাবে বলে এখানকার ধান ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে নতুন ধান আমদানির পথে বড় বাধা মেঘনা নদীতে ডাকাতি।

সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীভাজার এবং হবিগঞ্জের ধান ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন নৌপথের রাজাপুরে গত সাত-আট দিন ধরে নিয়মিত ডাকাতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ ধানের মোকামে গিয়ে জানা গেছে, বাংলা বছরের প্রথম দিন থেকেই আশুগঞ্জ মোকামে নতুন ধান আসতে শুরু করেছে। প্রথম প্রথম ধানের সরবরাহ কম থাকলেও দিন যতই গড়াচ্ছে ধানের আমদানি বাড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ধানের সরবরাহ কম বলে জানান এখানকার চাতাল ব্যবসায়ীরা।

এই মোকামে ধান বিক্রি করতে আসেন সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জের ধান ব্যবসায়ীরা। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার সজল মিয়া বলেন, উজানের পানি এবং পাহাড়ি ঢলে প্রচুর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আধাপাকা ধান কোনো রকমে কেটে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। প্রতিমণ ধান ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এতে ধান কাটার শ্রমিক, সার, পানি খরচ বাদ দিলে উৎপাদন খরচই পাইনি। তিনি আরও বলেন,পানিতে আমার  সাত বিঘা ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে আশুগঞ্জ মোকামে ব্রি-২৮ প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে সাড়ে ৯০০ টাকায়। ব্রি-২৯ ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায় এবং মোটা ধান( হিরা) প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৩০-৪০ টাকায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাতালকল মালিক সমিতির নেতা হাজি দানা মিয়া বলেন, আশুগঞ্জ মোকামে বর্তমানে ধানের যে মূল্য তা ঠিক আছে। কারণ এখন কাঁচা ধান আমরা কিনছি। এক মণ কাঁচা ধান শুকিয়ে আমরা ৩০ কেজি ধান পাই। এই অবস্থায় এক মণ ধানের মূল্য পড়ছে প্রায় এক হাজার টাকার উপরে। তা ছাড়া এই কাঁচা ধানে ক্রাশ করার পর চ ১৩-১৪ কেজি চাল হয়। এ হিসাবে বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের মুল্য বেশি আছে বলে আমরা মনে করি।

এদিকে আশুগঞ্জ মোকামে ধান নিয়ে আসার বড় বাধা এখন নদী পথে ডাকাতি। নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ির এক ধান ব্যবসায়ী বলেন, সরাইল উপজেলার দুবাজাইল এবং রাজাপুর এলেই ডাকাতের কবলে পড়তে হয়। নৌপুলিশ থাকলেও তারা ডাকাতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসে না। পুলিশকে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে।

তা ছাড়া শনিবার সকালে মেঘনা নদীর সরাইল উপজেলার রাজাপুর নামক স্থানে পাচটি ধান বোঝাই নৌকায় ডাকতির ঘটনা ঘটেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা জয়ধরকান্দি গ্রামের সামসুল হক বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় আমার নৌকাটি ধান নিয়ে রাজাপুরের নদীর মোড় পার হওয়ার পর পরই ডাকাতদল আমার নৌকায় আক্রমণ করে নৌকার লোকদের দেশীয় অস্ত্রদিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এ সময় ডাকাদল আমার নৌকা থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং পাচটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়। এতে বাধা দিতে গিয়ে পাঁচজন আহত হন।

অপর দিকে কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে ধান নিয়ে আসা জোবায়েদ জানান, গতকাল ভোর ৬টা থেকে একইস্থানে আরো চারটি নৌকায় ডাকাতি হয়েছে। আমরা এই ডাকাতি বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তা ছাড়া রাজাপুরের মেঘনা নদীতে গত সাত-আট দিন ধরে নিয়মিত ডাকাতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। সারা পথ নিরাপদে এলেও রাজাপুরে এসে তাদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।

এ বিষয়ে নৌপুলিশের দুবাজাইল ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সালাম বলেন, রাজাপুরের মেঘনা নদীতে ডাকাতির বিষয়ে আমি কিছ জানি না। কারণ প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে নৌপুলিশের টহল থাকে ।

এদিকে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের নৌপুলিশের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন,ডাকাতির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে এ ধরনের ডাকাতি হয়ে থাকলে ডাকাতি বন্ধে আমরা প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব যেন আর ডাকাতি না হয়।