ইউটিউব থেকে শিখে মোটরসাইকেল চুরি, অবশেষে ধরা

Looks like you've blocked notifications!
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার দুই চোর। ছবি : মিরপুর মডেল থানা

ইউটিউব দেখে শেখেন চুরির কৌশল। এরপর করেন চুরি। এমন কাজে কতোবার সফল তা যদিও এখনও অস্পষ্ট। তবে, পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন এ পর্যন্ত আট বার। যদিও সাতবার বের হয়েছেন কারাগার থেকে। এই কৌশলী চোরের নাম রেজা মো. সাইমুন ওরফে তরুণ (৩৫)। তার দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। যদিও সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

আজ রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। তিনি আরও জানান, গতকাল শনিবার রাতে মিরপুরের রাইনখোলা বড় মসজিদের সামনে থেকে মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন সাইমুন। সঙ্গে ধরা পড়েন তার আরেক সহযোগী সাদমান সাকিব (২৯)। পরে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা।

মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া মো. সাইমুন ওরফে তরুণ দাবি করেছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু, স্নাতক শেষ করতে পারেননি। কারণ, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার দাবি, তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায় চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। আর সাদমান সাকিব আর্কিটেকচারাল ভিজুয়ালাইজেশন বিষয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অধীনে ডিআইপিটিআই থেকে ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাইমুন ২০১৫ সালে ৪র্থ বর্ষে থাকাকালে বহিষ্কার হন। এরপর কিছুদিন একটি গানের দলে ছিলেন, বিভিন্ন স্টেজ শো করতেন। কিন্তু, পরে মোটরসাইকেল চুরিতে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে মুন্সীগঞ্জে বিক্রি করতেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ও মুন্সীগঞ্জে বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার সাজাও হয়।’

মোহাম্মদ মহসীন আরও জানান, পুলিশের হাতে আটবারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাইমুন। তবে সাদমান সাকিব কখনও গ্রেপ্তার হননি, তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই।

মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘সাধারণত অন্যরা মোটরসাইকেল চুরি অপর কোনো চোর থেকে শিখলেও সাইমুন শিখেছেন নিজে নিজে। আর এক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন ইউটিউবের। সেখান থেকে শিখে প্রথমে নিজের মোটরসাইকেলে প্রয়োগ করেন। এরপর শুরু করেন চুরি।’ তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে সে ১৫ মাস জেল খেটে দুই মাস আগে জামিন পায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি মহসীন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নিয়মিত আইন অনুযায়ী আদালতে সোপর্দ করা। আমরা তাই করি। কিন্তু, আসামি গ্রেপ্তারের পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে পুনরায় একই কর্মে লিপ্ত হন।’ 

বারবার ধরা পড়ে সাজার আসামি ছাড়া পেয়ে আবারও চুরিতে জড়িয়ে পড়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফৌজদারী আইনজীবী আব্দুল আল মনসুর রিপন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চুরির মামলা জামিন অযোগ্য ধারা। তবে, অনেকক্ষেত্রে আসামির কাছ থেকে কোনো কিছু উদ্ধার না হলে বা আদালতে সাক্ষী দীর্ঘদিন না উপস্থিত হলে আদালত জামিনের বিবেচনা করে থাকেন। তবে, অভ্যাসগত চোর যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার জামিন আদালত অনেক সময় দেন না।’

আইনজীবী রিপন আরও বলেন, ‘মামলা তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, আসামির বিরুদ্ধে আগে কোনো চুরির মামলা আছে কী না? এক্ষেত্রে আসামির যদি আগে মামলা থাকে, তাহলে আসামির জামিন পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে থাকে। বিচারকগণ সে সময় আসামির জামিন নাকচ করে থাকেন। তবে, আদালতে মামলার বিচার দ্রুত হলে আসামির জামিন পাওয়া কঠিন হবে ও আসামি একই অপরাধে পুনরায় জড়াবে কম।’