ইউনিয়ন আ.লীগনেতাকে জুতাপেটা উপজেলা চেয়ারম্যানের

Looks like you've blocked notifications!
অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার। ছবি : সংগৃহীত

রাঙামাটির লংগদুতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগনেতাকে জুতাপেটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়ছেন উপস্থিত আওয়ামী লীগনেতারা। ঘটনার পর প্রথমে আহত আওয়ামী লীগনেতা বেলাল হোসেনকে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগনেতারা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হোসেন আলী বলেন, ‘আমি ও মারধরের শিকার মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন উপজেলা পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার। তিনি বেলালের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান এবং একপর্যায়ে তার ওপর চড়াও হয়ে চর-থাপ্পর মারতে থাকেন। আমরা তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে তিনি পায়ের জুতা খুলে বেলালকে মারেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই হতবাক। এরপর আমরা বেলালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

মারধরের শিকার আওয়ামী লীগনেতা বেলাল হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তখন  উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তখন তিনি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি তার নিজের বাড়িতে বসে করেন। সেখানে অনেক পুরোনো সদস্যকে রাখা হয়নি। মাইনীমুখের হাজাছড়া এলাকার নুরুল ইসলাম নামের এক মুরব্বিকেও সেই কমিটিতে রাখা হয়নি। কেন কমিটিতে রাখা হয়নি ওই মুরব্বি আমার কাছে তা জানতে চাইলে আমি বলেছি, কমিটি বারেক সরকার তার বাড়িতে বসে করেছেন। আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি। কেন আপনাকে রাখেননি এই প্রশ্নের জবাব বারেক সরকার দিবেন। হয়তো ওই মুরব্বি এই কথাগুলো বারেক সরকারকে জানিয়েছেন। আর এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়েছেন।’

ঘটনার সময় রাঙামাটিতে অবস্থান করছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু।

এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগনেতা বেলালের ওপর যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারকে গত ফেব্রুয়ারিতে দলীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজকের ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিতে আমরা জেলা কমিটির কাছে লিখিত আবদেন করব। তিনি যা করছেন, তাতে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ করার মতো আর কোনো পথ রাখেননি। আমরা আমাদের অভিভাবক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘আমি কৃষি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে অফিসে ফিরছিলাম। এ সময় বেলাল ও হোসেন আলী আমার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তখন তাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগনেতাকে মারধরের প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি : এনটিভি

লংগদু সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্তাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল আলী, সহসভাপতি হোসেন আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল মামুন খান প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং নিজের ছেলে এরশাদ সরকারকে মাইনীমুখ ইউনিয়নে প্রার্থী করাসহ নানা বিতর্কিত কারণে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মূলত তখন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত। নানা কারণে আওয়ামী লীগনেতাদের ওপর চড়াও হন তিনি এবং তাঁর পেটুয়া বাহিনী। তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন বক্তারা।

প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য আছমা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুভাষ চন্দ্র দাশ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর হোসেন, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস ছালাম খাঁ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর বারেক সরকার লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বহিষ্কৃত সভাপতি। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় তিনিসহ ছয় নেতাকে সাময়িকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সে আদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।