ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টে হিসাবে গড়মিল : বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি ‘টাকা উধাও হয়নি’
ইসলামি ধারায় পরিচালিত দেশের বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়-সংলগ্ন গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা ‘উধাও’ হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তবে, এই উধাও হওয়ার খবরের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ওই ব্যাংকে আর্থিক গড়মিলের তথ্যের কথা স্বীকার করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর এক যুগ্ম পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শনে যায়। সকাল ১০টার আগেই তাঁরা শাখায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, শুরুতেই তাঁরা ভল্ট পরিদর্শন করেন। কাগজে-কলমে শাখার ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও পরিদর্শক দল সেখানে ১২ কোটি টাকা পায়।
ভল্টে আর্থিক এ গড়মিলের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারেননি শাখার কর্মকর্তারা। অভিযোগ আছে, এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা তৎপরতা শুরু করে শাখা কর্তৃপক্ষ। শাখা ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষও এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে এনটিভি অনলাইন। তাঁর দাবি, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংকে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ভল্টে যে টাকা থাকার কথা, তা নেই। কেন নেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, আগের দিন ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হওয়ার পর এক জন ভ্যালুড কাস্টমার এসেছিলেন ব্যাংকে। ওই কাস্টমারের ব্যাংকে নিয়মিত কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়।’
সিরাজুল ইসলাম দাবি করে আরও বলেন, ‘ওই গ্রাহক একটি চেক নিয়ে এসেছিলেন। টাকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল তাঁর। কিন্তু ব্যাংকিংয়ের সময় শেষ হওয়ায় তাঁকে ভল্ট থেকে টাকা দেওয়া হয় এবং চেক রেখে দেওয়া হয়। পরদিন পরিদর্শক দল পরিদর্শনে যায়। সে সময় তারা এ ভল্টে থাকা ১৯ কোটি টাকা পাননি। সুতরাং, উধাও শব্দের সঙ্গে আমি একমত নই। টাকা তো উধাও হয়নি। ব্যাংকিং টাইমের পরেও টাকাগুলো ভল্ট থেকে দেওয়া ঠিক হয়েছে নাকি হয়নি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। সেজন্য আমরা আরও জানার চেষ্টা করছি।’
‘হিসেব মতো ভল্টে টাকা পাওয়া যায়নি। কারণ, ওই টাকা আগেই ওই সম্মানিত গ্রাহককে তাঁর সম্মানের দিকে তাকিয়ে দেওয়া হয়। এবং পরের কার্যদিবসে ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া হয়। তাঁর চেক আগেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। এখন সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। তবুও পরিদর্শনে গিয়ে তো তথ্যগত মিল পাওয়া যায়নি। ফলে আমরা বিষয়টি দেখছি’, যোগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার অপারেশন ম্যানেজার সাইফুল আজম মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংকিং বিধিবিধানের বাইরে কিছু করার সুযোগ তাদের নেই। শাখায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।’