ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকায় ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন অবৈধ : র্যাব
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’-এর কোনো প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই; কোনো ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
র্যাবের দাবি, এ ৭৫০ কোটি টাকার পুরোটাই অবৈধ্য পথে লেনদেন হয়েছে। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানের কোনো বৈধ ভিত্তি নেই। তারা বহু মানুষের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে পণ্য দেয়নি। পরবর্তীকালে ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সিওও মো. সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক হিসেবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় এক ভুক্তভোগীর করা প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় আজ বুধবার ভোরে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে ধামাকা শপিং ডট কমের সিরাজুল ইসলাম রানা (৩৪), ইমতিয়াজ হাসান সবুঞ্জ (৩১) ও ইব্রাহিম স্বপনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়।’
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এ পর্যন্ত গ্রাহকের প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিপুল অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে মাত্র এক লাখ টাকার মতো হিসাব পাওয়া গেছে। বাকি টাকা সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকা। কাস্টমার বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা সিরাজুল ইসলাম রানা ধামাকা শপিং ডট কমের সিওও। ইমতিয়াজ হাসান সবুজ মোবাইল ফ্যাশন এবং লাইফ স্টাইল ক্যাটাগরির প্রধান। এবং ইব্রাহীম স্বপন ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে ধামাকা ডিজিটাল, এবং পরবর্তীকালে ২০২০ থেকে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। গ্রেপ্তার করা ব্যকইতরা ২০২০ থেকে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০২০-এর অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক অ্যাগ্রেসিভ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নামে।’
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আর্থিক সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের অফিস ও ডিপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি এ বছরের জুন থেকে কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধামাকা শপিং ডট কমের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কারণে জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
মহাখালীতে ধামাকা শপিং ডট কমের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬০০টি ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে। এর মধ্যে নামিদামি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যেমন, ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড এবং বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া ‘হোল্ড মানি প্রসেস প্ল্যান’ অর্থাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে রেখে অর্থ সরিয়ে ফেলা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি, আর নানাবিধ অক্ষর দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হতো, যাতে দ্রুততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি সম্ভব হয় বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ধামাকা শপিং ডট কমের গ্রাহক সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মোটরবাইক, গৃহস্থালিপণ্য ও ফার্নিচার ইত্যাদি বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হত। ধামাকা শপিং ডট কমের বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো—সিগনেচার কার্ড ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, ধামাকা নাইট-এ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, রেগুলার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রদান করা ইত্যাদি। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’