উপহারের টিকা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় টিকা প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৮০ শতাংশ জনসাধারণকে টিকার আওতায় আনা গেলে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব হবে। অনেক দেশ ক্রমান্বয়ে সে পরিস্থিতি অর্জনের পথে সাফল্য দেখাচ্ছে। আমাদের মতো জনবহুল দেশে উপহার আর ভিক্ষায় সংগৃহীত অপর্যাপ্ত টিকা দিয়ে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলা সম্ভব নয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় মিলনায়তনে ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জি এম কাদের একথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সাফল্য নেই। টিকা কূটনীতিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে উপহারের পাঁচ থেকে ১০ লাখ টিকা পেয়ে স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অথচ ১৮ কোটি মানুষের টিকা পাওয়ার বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই সরকারের ঘোষণায়। টিকার বিষয়ে দেশের মানুষের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ করোনার টিকা পাওয়ার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা জানতে চায়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সারা বিশ্বের উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যেই রোডম্যাপ অনুযায়ী গণটিকা কর্মসূচি শুরু করেছে। ওই সব দেশের মানুষ জানে, কখন তাদের টিকাদান কর্মসূচি শেষ হবে। কিন্তু, আমাদের দেশের কেউই জানে না কখন আমরা গণটিকা শুরু করতে পারব!
জি এম কাদের আরও বলেন, অদূরদর্শিতার কারণে টিকা ক্রয়ে বিকল্প কোনো সোর্স রাখেনি সরকার। অথচ, গেল বছর বারবার সরকারকে টিকা ক্রয়ে বিকল্প সোর্স রাখতে পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। এ ছাড়া বাজেটে টিকা ক্রয়ের জন্য স্পষ্ট বরাদ্দ নেই। তবে বাজেট বক্তৃতায় কিছু দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে টিকা সরবরাহ ও টিকা কেনার অর্থ প্রাপ্তির আশ্বাস উল্লেখ করা হয়েছে (বাজেট বক্তৃতার পৃষ্ঠা-৪৫)। বিষয়টি এখনো সে পর্যায়ে আছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। তাই আমরা চাই উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সহায়তা এবং আইসিইউ থাকতে হবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে। যেহেতু যথেষ্ট পরিমাণ করোনা টিকা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে পরিস্থিতিতে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই পরিকল্পিতভাবে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। গণহারে মৃত্যু ঠেকাতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে উপরে বর্ণিত পন্থার বাস্তবায়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে দেশীয় করোনার টিকা উদ্ভাবনের যেকোনো উদ্যোগকে সহযোগিতা দিতে হবে।
জি এম কাদের বলেন, আগামী প্রজন্ম এক সময় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনী নিয়ে গবেষণা করবে। তখন ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ বইটি তরুণ প্রজন্মের কাছে সমাদৃত হবে। আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে পল্লীবন্ধুর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ গ্রন্থের প্রকাশক আহসান আদেলুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, পল্লীবন্ধু রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে এবং শহরের ফুটপাতেও চাঁদাবাজি চলছে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী পল্লীবন্ধু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছেন। ইসলামের খেদমতে অসামান্য অবদান রেখেছেন পল্লীবন্ধু।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, একটি বইয়ের মধ্যে পল্লীবন্ধুর কীর্তি তুলে ধরা যায় না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন সৈনিক হয়েও রাজনীতিতে এসে দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। পল্লীবন্ধুর অবদান কেউ কোনো দিন মুছে ফেলতে পারবে না।