উৎপাদন-বিপণনে সরগরম ভৈরবের পাদুকাপল্লি

Looks like you've blocked notifications!
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দিনরাত কাজ চলছে ভৈরবের পাদুকাপল্লিতে। ছবি : এনটিভি

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে উৎপাদন আর বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জুতোর কারিগরেরা। ছাঁচে ফেলে কেউ কাটছেন চামড়া, তাতে কেউ লাগাচ্ছেন আঠা, কেউ করছেন অন্যান্য কাজ। এভাবেই দিনরাত চলছে তাঁদের কাজ। এমন ব্যস্ততা চলবে ঈদের চাঁদ না ওঠা পর্যন্ত।

দেশে করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ঈদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ভৈরবের জুতা ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক ও শ্রমিকেরা। তবে, নিত্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির মধ্যে নির্ধারিত মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের ক্ষোভ রয়েছে।

এদিকে, উপকরণে উচ্চমূল্য নিয়ে মালিকদের মাঝে আছে রয়েছে অসন্তুষ্টি।

শহরের কমলপুর সাতমুখি এলাকার হাজী কালুমিয়া পাদুকাপল্লির শ্রমিক হোসেন মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এবার বাড়তি আয়ের জন্য দিন-রাত কাজ করছি।’

গাছতলাঘাট পাদুকাপল্লির শ্রমিক সানাউল্লাহ জানান, শরীরের ঘাম ঝরিয়ে রোজগার করা টাকার পুরোটায় খাবার কিনতে চলে যায়। বাড়তি শ্রমের আয় চলে যাবে ঈদ কেনা-কাটায়। দেখা যাবে ঈদের পরে পকেট আবার খালি। এদিকে, ঈদের পর কারখানা বন্ধ থাকবে অনেকদিন।’

একই বক্তব্য গোধূলিসিটি ও লক্ষ্মীপুর এলাকার শ্রমিক রেহেনা বেগম, নাজির মিয়া আর লুৎফা বেগমেরও। তাঁরা জানান, দিন-রাত শ্রম দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি আয় করা যায় না। অথচ ছোট একটি সংসার চালাতেও এখন প্রতিদিন হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।

শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দর কমানোর দাবি জানান।

ভৈরব গাছতলাঘাট এলাকার তাহমিনা স্যান্ডেল ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী মো. মিয়ার উদ্দিন অপু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর কোভিড-১৯-এর প্রভাবে কারখানাগুলোর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে এ বছর পুরোদমে উৎপাদন করছে। তবে জুতা তৈরির অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় জুতার দাম বাড়েনি।’

মুসলিমের মোড় এলাকার সজীব ফুটওয়্যারের মালিক মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর ভৈরবের জুতার মার্কেট অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা এখানে ভিড় করছেন। কারণ, অন্যান্য বছরে তুলনায় এখানকার কারখানায় বাহারি রকমের ডিজাইনের জুতা উৎপাদন করা হচ্ছে।

নোয়াখালী থেকে আসা পাইকার রহমান মিয়া, ময়মনসিংহের খলিল উল্লাহ ও গাজীপুরের আতাহার মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদের মৌসুমে ভৈরবে জুতা কিনতে আসি। এখানকার উৎপাদিত জুতা খুবই উন্নত মানের এবং ব্যাপক ক্রেতা চাহিদা রয়েছে। তবে, এ বছর জুতার দাম কিছুটা বেশি।’

ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া জানান, কোভিড-১৯ প্রভাবে ভৈরবের জুতা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে সে ক্ষতির কিছুটা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টায় আছেন মালিকেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার পরেই দেশের পাদুকাশিল্পের সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে নদীবন্দর ভৈরবে। অবিভক্ত ভারতের বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজধানী কলকাতার পাদুকাশিল্পে কাজ করা এখানকার কারিগরেরা নিজ এলাকায় এসে অল্প পরিসরে গড়ে তুলেছিলেন পাদুকাশিল্প কারখানা। যদিও তখন ভৈরব অঞ্চল ছিল তাঁতশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ।

পরে ধীরে ধীরে তাঁতশিল্প বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহারা তাঁতশিল্পের মালিকেরা তাঁদের শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে তোলেন পাদুকাকারখানা। ছোট ছোট ঘর হয়ে ওঠে শিল্প।

এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে এলাকায়। যার মধ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ রপ্তানিমুখি কারখানা ২০টি।

এসব কারখানায় এক লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। যেখানে নারী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার।

এ ছাড়া পাদুকাশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাঁচামালামালের দোকান, বক্স তৈরির কারখানা, পাদুকা বিক্রির পাইকারি আড়ত ইত্যাদিতে কাজ করেন আরও ৩০ থেকে ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।