একই পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী, পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে একই পরিবারে তিন প্রতিবন্ধীর যেন কষ্টের শেষ নেই। এভাবেই তাদের অতিবাহিত হয়েছে ২৫ বছর। পাশে কেউ নেই। বাকি জীবনটাও হয়তো এভাবেই চলতে হবে তাদের।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের তিন সন্তানই শিশুকাল থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিন ছেলেমেয়ের প্রতিবন্ধীভাতার সামান্য টাকা এবং অন্যের বাড়িতে কাজের মজুরির সামান্য টাকায় কোনোমতে চলছে বিধবা রেজিয়া বেগমের সংসার। ৩০ বছর আগে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মারা যান স্বামী আলতাফ হোসেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর রেজিয়া চার সন্তানকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে বহু কষ্টে তাদের লালন-পালন করেন। বড় মেয়ে শাহারাকে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেন উপজেলার আব্দুল্যাপাড়ায় (শিবপুর গ্রামে)। পরে শাহারা অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে যান। এ কারণে সংসার হয়নি শাহারার। এর পর থেকে মা রেজিয়া বেগমের বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি। বড় ছেলে আলমগীর ও ছোট ছেলে মহসিন শিশুকাল থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। একমাত্র সুস্থ মেজ মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ে হয়েছে একই গ্রামে। তিনি তার নিজের সংসারে রয়েছে।
প্রতিবন্ধী মহসিন বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে সহযোগিতা পেলে ব্যাটারিচালিত একটি হুইল চেয়ার কিনে ব্যবসা করে উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম। কিন্তু আমার কাছে কোনো অর্থ নাই।’
রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর রেখে যাওয়া কিছু আবাদী জমি বিক্রি করে সন্তানদের লালন-পালন করেছি। এখন বাড়ির ছয় শতক জমি ছাড়া আর কিছুই নাই। প্রতিবন্ধী সন্তানদের ভাতার টাকা এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে এখন আর সংসার চলে না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিউল আলম বলেন, ‘একই পরিবারের তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এটি খুবই দুঃখজনক খবর। ইতোমধ্যে তিন ভাইবোনকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এ বছর রেজিয়া বেগমের বিধবা ভাতা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অসহায় পরিবারটিকে কীভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করা যায় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’