একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন

Looks like you've blocked notifications!
ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবদিক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্যের আগে আজ শুক্রবার পাবনায় রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়। ছবি : এনটিভি

ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবদিক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের পর জয়কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে পাবনা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

এর আগে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে রণেশ মৈত্রের মরদেহ রাজধানী ঢাকা থেকে পাবনা শহরের বেলতলাস্থ বাসভবনে গিয়ে পৌঁছায়।

পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২টার দিকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে। সেখানে রণেশ মৈত্রকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা ও পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জুয়েল।

এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, জেলা পরিষদ প্রশাসক রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, নব নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

দুপুর ৩টায় রণেশ মৈত্রের মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর গড়া পাবনা প্রেসক্লাব চত্বরে। সেখানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য ও  সাংবাদিকরা শেষবারের মতো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধ নিবেদন করেন। সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন শেষে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন ও রণেশ মৈত্রের ছেলে প্রবীর মৈত্র।

১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাংবাদিক রণেশ মৈত্র। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। রণেশ মৈত্র আজীবন দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করে গেছেন।

১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু রণেশ মৈত্রের। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে।

১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারের পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারা দেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি।

এ ছাড়া ১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রণেশ মৈত্র। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়। সেই বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

রণেশ মৈত্র দীর্ঘদিন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কাছ থেকে একুশে পদকে ভূষিত হন।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৩টা ৪৭ মিনিটে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রণেশ মৈত্র।