এক টাকার রেস্টুরেন্ট এখন কুড়িগ্রামে
ঢাকা, কক্সবাজারের পর এবার কুড়িগ্রামে চালু হলো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক টাকার রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটিতে ৫০জন একসঙ্গে বসে খেতে পারছেন। দিনে আয়োজন থাকছে ৫০০ মানুষের জন্য খাবারের। বর্তমানে সপ্তাহে দুদিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলছে।
জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে স্থায়ীভাবে রেস্টুরেন্টটি চালু করেছে। এক টাকার এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাচ্ছে বিরিয়ানি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ বারো পদের খাবার, যা ক্ষুধার্ত মানুষেরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছামতো তাদের পছন্দের খাবার খেতে পারছেন।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে তৃপ্তি সহকারে পছন্দের খাবার খেতে পেরে খুশি সুবিধাভোগীরা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আধুনিক ঘরোয়ানা এই রেস্টুরেন্টটি নিশ্চিত করেছে খাবার খাওয়ার এক মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। যেখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার।
সুবিধাভোগী ছকিনা বেগম বলেন, ‘এক টাকার রেস্টুরেন্টে নাতি-নাতনি, বিয়াইন, বোনসহ আসছি। হামরা গ্রামের মানুষ কোন দিন চিন্তা করতে পারি নাই যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খামু। আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি হয়েছে।’
সুবিধাভোগী সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা কাশেম আলী বলেন, ‘হামার বয়স মেলা হইছে। কোন দিন টাকার অভাবে বড় হোটেলে খাবার খেতে পারি নাই। চা-বিস্কুট পাঁচ টাকা দিয়ে খাইছি। এখন জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না। কিন্তু বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামী খাবার খাতি পারমু ভাববার পারি নাই। এক টাকায় মন মতো খাতি পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।’
বুলবুলি আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে আইছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টি খেলাম। কামলা দেয়া সংসারে শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও চার থেকে পাঁচ শত টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।’
স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, ‘আজ জীবনে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সায়। এতে করে উপলব্ধি করতে পারব, হোটেলের নিয়মিত ওয়েটার ও বাবুর্চিদের কতটা পরিশ্রম করতে হয়। সত্যি আমি বেশ গর্বিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কাজ করতে পেরে।’
স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আকরুম হোসেন বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেয়। পরে তারা এসে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুবিধা নেন।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, ‘বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে, এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব।’