এক প্রেমিকার দুই প্রেমিক, একজনের মরদেহ নদীতে

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

এ যেন চলচ্চিত্রের ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। এক প্রেমিকার দুই প্রেমিক। অবশেষে গল্পে সম্পর্কের পরিণতি করুণ। গালিগালাজ করায় এক প্রেমিক ইমন রহমাননকে ভাসতে হয়েছে নদীতে। তাঁকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন অপর প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম রাসু (২২)। গত ৭ জুলাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আর ১৬ জুলাই ঢাকার আমিন বাজার কেবলার চর এলাকার তুরাগ নদীতে নৌ-পুলিশ সেই মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহটি তখন পুরোপুরি পঁচে গেছে। পরে ইমনের পরিবার ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশ মরদেহটি ইমনের বলে শনাক্ত করে।

মরদেহ উদ্ধারের পরদিন, পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয় কালিয়াকৈর থানায়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘ইমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’। যদিও নিখোঁজের পর আরও একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল ইমনের পরিবার।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুরো গল্পটি সত্য বলে দাবি করেন র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, লাশটি পঁচে যাওয়ার কারণ গত ৭ জুলাই থেকে প্রায় ১২ দিন লাশটি নদীতে ছিল। যাতে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কেউ জানতে না পারে। সেজন্য ইমনের লাশটি তুরাগ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৭ জুলাই রাতের খাবার খাওয়ার পর ইমন রহমান তাঁর মায়ের কাছ থেকে ২০০ টাকা নেন। এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। প্রথমে ঘটনাটি স্বাভাবিক মনে হলেও ইমনের বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে পরিবারের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পাঁচদিন ইমনের পরিবার সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুজি করে। কিন্তু, তাঁর সন্ধান পাওয়া যায় না। পরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় নিখোঁজ মর্মেজিডিকরেন।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘এরপর গত ১৬ জুলাই আমিন বাজার কেবলার চর এলাকার তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ লাশটিকে ভুক্তভোগী ইমন রহমানের বলে শনাক্ত করে। উদ্ধারকৃত লাশটি সম্পূর্ণ পচে যাওয়ায় এটি হত্যাকাণ্ড কিংবা দুর্ঘটনা কি না ,তা তাৎক্ষণিকভাবে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। তবে, ইমনের পরিবারের দাবি, ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ঘটনার তদন্তে নামে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার ভোরে র‌্যাব-১-এর গাজীপুর ক্যাম্পের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন আবাদপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে আত্মগোপনে থাকা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী রাশেদুল ইসলাম রাসুকে গ্রেপ্তার করে।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘পরবর্তীতে রাসুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপর চার সহযোগীর মধ্যে অন্যতম বিপুল চন্দ্র বর্মনকে (১৯) গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর কালামপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাশেদুল ইসলাম রাসু নিজ বাড়ির শোবারকক্ষের বিছানার নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা ও বিপুল চন্দ্র বর্মনের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

‘র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ইমনকে হত্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। দিয়েছেন, হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা’, যোগ করেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাশেদুল ইসলাম রাসু ও বিপুল চন্দ্র বর্মনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা আরও জানান, ভুক্তভোগী ইমনসহ তারা সবাই একই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করত। গত ৫ থেকে ৭ বছর তারা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, এ ছাড়া অভিযুক্তরা গত ২ থেকে ৩ বছর একইসঙ্গে মাদক সেবন করতেন। তারা পরস্পরের বন্ধু হলে ইমনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগে থেকে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ইমনের সঙ্গে রাশেদুল ইসলাম রাসুর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভের তীব্রতা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে রাশেদুল ইসলাম রাসু তাঁর অপর ৪ জন সহযোগীকে নিয়ে ইমনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসু মুঠোফোনের মাধ্যমে গত ৭ জুলাই ইমনকে তাঁর বাড়ির পশ্চিম পাশে বটগাছতলায় আসতে বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে রাসু, বিপুলসহ অন্যান্য হত্যাকারীরা আগে থেকেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওৎ পেতে ছিল। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে নটার দিকে ভুক্তভোগী ইমন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন রসুলপুর বটগাছতলায় পৌঁছামাত্রই রাশেদুল ইসলাম রাসু ইমনকে তাঁর প্রেমিকাকে গালিগালাজ করার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে রাসুর কাছে থাকা দা দিয়ে ইমনকে কোপ দেন। সে সময় অন্যান্য আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ইমনকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ইমন নিস্তেজ হয়ে গেলে হত্যাকারীরা ইমনের লাশ যাতে কেউ খুঁজে না পায় সে উদ্দেশ্যে তুরাগ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘আমরা আপাতত যেটা জেনেছি, তা হলো ইমন এবং রাসু একটি মেয়েকে ভালোবাসতেন। এ গল্প একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। ঈমনের সঙ্গে প্রথমে প্রেম ছিল, পরবর্তীতে রাসুর সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ওই মেয়েটির।’

‘তবে, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বক্তব্য জানার সুযোগ নেই। আবার অভিযুক্তদের সঙ্গেও আরও বিস্তারিত কথা বলার দরকার। প্রয়োজনে এ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আমরা কথা বলব’, যোগ আব্দুল্লাহ আল মোমেন।