এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব, ইনশাল্লাহ। এটিই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশ-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়।

আজ বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 

সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতাকে প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাঙালির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। আর সেই সংগ্রামের পথ বেয়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা, স্বাধীন রাষ্ট্র ও একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদা। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তার শত শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি, শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা-দারিদ্র্য এক জনপদকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং যুদ্ধ পরবর্তী দেশ হিসেবে যেসব বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অনেক স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট আমাদের কাছ থেকে তাঁকে কেড়ে নেয় ১৫ আগস্ট। এরপর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রহর আজ শেষ হতে চলেছে। এমন এক সময় আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, যখন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। মাথাপিছু আয়ের সম্মানজনক দুই হাজার মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। দারিদ্র্যের হার ২০.০৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১২ বছরের প্রচেষ্টা ও জনগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় এই প্রাপ্তি। আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমাকে সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। আজকের বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেখান থেকে অবনমন করা বা নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ, আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশ-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে আমাদের অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই শুভ জন্মদিনে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উন্নয়ন অগ্রগতিকে সামনের দিকে নিয়ে যাই।’

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সম্বৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাবার পালা। পেছনে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব ইনশাল্লাহ। এটাই আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। আজ সে উৎসবের শুরুর দিন। যদিও আমাদের অনুষ্ঠান ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকবে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী। কারণ, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস। বিজয় দিবস পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ থাকবে উৎসবমুখর। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।’

‘আমি আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতার প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ও দুই লাখ মা-বোনের প্রতি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা সরকার পরিচালনা করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আর সেই সঙ্গে আমি, আমার আদরের ছোট বোন ছাড়া পরিবারের সব সদস্যকে হারাই।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি আজকের দিনে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত আমার পিতা, আমার মা, আমার তিন ভাই, ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, দুই ভ্রাতৃবধূ, আমার চাচা শেখ আবু নাসেরসহ ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদেরকেও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিম নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আজ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সালিহ।

শিশু শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং এর পরপরই শত শিশু শিল্পীর সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়। মঞ্চে শত শিশু শিল্পীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এরপর দেশসেরা শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন।

এরপর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১০ দিনের বর্ণিল উৎসব।

অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা’র ধারণ করা ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। এরপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গণে কাজ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার মার্ক টালির বক্তব্য প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মালদ্বীপের ফাস্টলেডি ফাজনা আহমেদ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা খানম, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা প্রধান, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা পর্ব শেষ হয়। পরে একটু বিরতি দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাতে আতশবাজি ও লেজার শো হওয়ার কথা রয়েছে।