এটা অধমর্ণের বাজেট : মঈন খান

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান। ফাইল ছবি

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এই আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এমন একটি বাজেট উপহার দিয়েছে যা হলো একটি ‘অধমর্ণের বাজেট’ (ঋণী বা দেনাদার)। মোট বাজেটের ৩৫.৫৬ শতাংশ, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশের বেশিই হলো ঘাটতি যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকেই ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি অতীতে এদেশকে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা থেকে বার বার বের করে আনার চেষ্টা করেছে আর আওয়ামী লীগ তাদের বিশৃঙ্খল মেগা প্রকল্প ও মেগা দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতিকে বার বার বৈদেশিক নির্ভর করে দেশের প্রতিটি শিশুর মাথায় জন্মের আগেই হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এবারের বাজেট তারই চরম বহিঃপ্রকাশ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার বাজেটের ব্যয় বেড়েছে ১২ ভাগ।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

বাজেটে মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.২ শতাংশ। এই হার গত বাজেটে ছিল ৬.১ শতাংশ। বাজেটের এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে এক লাখ এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এবার উন্নয়ন ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে শতকরা ১৪ ভাগ। এবার উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া মহামারি করোনা মোকাবিলায় এবার ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।

ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে অর্থ সংগ্রহের জন্য রাজস্ব খাতের আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি। কর আদায় হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের দেওয়া মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

১৯৭২ সালের ৩০ জুন ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। ওই বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার। এর ওপর ভিত্তি করেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

এবারের বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালের তৃতীয় বাজেট, আওয়ামী লীগ সরকারের ২১তম এবং বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট। আর, এটি হবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন।

এর আগে গত বছর ১০ জুন করোনা মহামারির মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এরপর ১১ জুন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হয়।

করোনা মহামারির এই সময়ে এবারও বাজেট অধিবেশনের মেয়াদ স্বল্প সময়ের হওয়ার কথা। আর, সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর বাজেট নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে পাস করা হবে।

আজকে বাজেট উপস্থাপনের আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও এতে অংশ নেন।