এবার পাট নিয়ে বিপাকে ফরিদপুরের চাষীরা
সোনালি আঁশখ্যাত পাটের জন্য বিখ্যাত জেলা ফরিদপুরে গত কয়েক বছর পাট চাষে লাভের মুখ দেখলেও এবার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পাটচাষী রাশেদ মণ্ডল, দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন এবার। চাষের প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েন। জমিতে সেচ দিয়ে পাটবীজ বপন করেন। তখন থেকে খরচ এতটা বেড়েছে যে, এখন এই টাকা ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপর আবার হানা দিয়েছে পাট গাছের মরা রোগ।
একই উপজেলার আরেক কৃষক শেখ এনায়েতের জমির পাট পরিপক্ক হয়েছে। এখন সেই পাট জাগ দেওয়া নেওয়া নিয়ে দুনিয়ার দুশ্চিন্তা তাঁর। এত পাট কোথায় জাগ দিবেন। খালে তেমন পানি না হওয়ায় পাট পরিপক্ক হওয়ার পরও অপেক্ষা করছেন এনায়েত। পানি হলে তখন পাট কাটবেন।
শেষ সময়ে এসে প্রচুর বৃষ্টির দেখা পেলেও তাতে খাল-বিলগুলোতে পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি জমছে না। এনায়েতের মতো অনেক কৃষকই তাঁদের পাট পরিপক্ক হওয়ার পরও পানির অপেক্ষায় তা কাটতে দেরি করছেন।
জেলায় সব চেয়ে বেশি পাট চাষ হয় সালথা উপজেলায়। সেখানকার কৃষক মজিদ শেখ বলেন, ‘শীতের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছি। গত কয়েকবারের থেকে এবার বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার নতুন সমস্যা পাট জাগ দেওয়া। খরচ বিবেচনা করে সরকার যেন উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে।’
সালথার বেশির ভাগ নিচু জমিতে হালকা পানি জমায় পাট কাটার ধুম পড়েছে। পানি বেশি হলেও যেমন পাট কাটা সমস্যা হবে একই সঙ্গে পানি পাট গাছের গোড়ায় থাকলে পাট মরে যাবে, যে কারণে কৃষকেরা পাট কেটে ফেলছেন আগে ভাগেই।
জেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম পাটের আবাদ হয়েছে এবার। তারপর পাটের মরা রোগ ও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা ভোগাচ্ছে চাষীদের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে সামনের কয়েক দিন আরও বৃষ্টি হবে তখন এই সমস্যা কেটে যাবে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় দুই জাতের অর্থাৎ তোসা জিআরও-৫২৪ (ভারতীয়) এবং মাস্তেও-৯৮৯৭ দেশি জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। এই মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৭৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। গত কয়েকবারের মধ্যে কম আবাদ হয়েছে এবার। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই পাটের আবাদ বেশি হয়ে থাকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. হযরত আলী পাটের মরা রোগ ও জাগ দেওয়ার সমস্যা নিয়ে বলেন, ‘তোষা জাতীয় পাট সাধারণত উচু জমিতে ভালো হয়। যেসব নিচু জমিতে এই পাট হয় সেখানে পাটের গোড়ায় পানি জমলে এই পাট গাছ মারা যায়। তবে উঁচু যেসব জমিতে পানি জমে না, এসব ক্ষেত্রে এর কোনো সমস্যা হয় না। এবার পাট চাষের প্রথম দিকে দেশে বৃষ্টিপাত হয়নি। তখন কৃষক সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছেন। যারা পারেননি তারা এবার পাট চাষ করেননি। এখন আবার কয়েকটি এলাকায় পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কয়েকদিন বাদে জাগ দেওয়ার কোনো সমস্যা থাকবে না।’