রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ

ঐশীর সাজা বৃদ্ধির সুযোগ নেই

Looks like you've blocked notifications!
ঐশী রহমান। ফাইল ছবি

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ঐশী রহমানের লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে ঐশী রহমানের সাজা বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ থাকল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তিনি বলেন, সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় এখন ঐশী রহমানের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকবে কি না এই বিষয়ের আপিল শুনানি হবে। আদালতে ঐশীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফয়সাল এইচ খান।

এসবি কর্মকর্তা মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট তাঁদের চামেলীবাগের বাসায় খুন হন। ওই হত্যাকাণ্ড এবং তাতে রহমান দম্পতির কিশোরী মেয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ নাড়িয়ে দেয় গোটা দেশ।

গত বছরের ৫ জুন আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি করে হাইকোর্টের ওই দ্বৈত বেঞ্চ ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ঐশীর অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হলেও তাঁর বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সাজা কমানোর এই রায় দেওয়া হয়েছে।

দণ্ড কমানোর ব্যাখ্যায় আদালত বলেন, পাঁচটি কারণে ঐশীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে।

এক. হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশী মাদকাসক্ত ছিলেন এবং ১৪ বছর বয়স থেকেই তিনি সিসা, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলের মতো নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতেন।

দুই. ঐশী বংশগতভাবে মানসিক রোগী। তাঁর চাচা-দাদি-খালা অনেকের মধ্যেই মানসিক রোগের লক্ষণ আছে, যা তাঁর মধ্যেও ছোটবেলা থেকে বিদ্যমান।

তিন. হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দ্বিতীয় দিনের মাথায় ঐশী আত্মসমর্পণ করেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

চার. ঘটনার সময় ঐশীর বয়স ছিল ১৯ বছর। এ বয়সের একটি সন্তানকে তাঁর বাবা-মা যথাযথভাবে দেখভাল করেননি। ফলে ঐশী ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন।

পাঁচ. ঐশীর বাবা-মা দুজনেই সন্তানের লালনপালন বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। এ কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি স্নেহবঞ্চিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এর আগে ঐশী রহমানকে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর দুইবার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলার অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরের দিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই দিন পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী রহমান।