ককটেল বিস্ফোরণ : পাবনায় বিএনপির ৬ শতাধিক নেতাকর্মী আসামি

Looks like you've blocked notifications!
পাবনায় অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। ছবি : এনটিভি

পাবনার সাতটি উপজেলা ও থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে একরাতে ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সেইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ২০টি ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। আর এসব ঘটনায় জেলা ও উপজেলা বিএনপির প্রায় ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে সাতটি মামলা করা হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এবং আজ বুধবার দুপুরে মামলাগুলো করা হয়। এসব মামলায় কোনোটির বাদী পুলিশ আবার কোনোটির বাদী আওয়ামী লীগনেতা। তবে এসব মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

ককটেল বিস্ফোরণ, ককটেল উদ্ধার ও মামলাগুলোকে ‘সাজানো ও গায়েবি মামলা’ হিসেবে দাবি করেছে বিএনপি। তারা বলছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র এসব মামলা। 

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম জানান, গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে ভাঙ্গুড়া পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখার সময় হঠাৎ করে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। 

মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলাম বুরুজসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।  

ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে আলহাজ টেক্সাইল মিলস হাইস্কুলে নাশকতার উদ্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময়  ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানার উপরিদর্শক (এসআই) শীতল কুমার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজনসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।  

চাটমোহর থানার ওসি জালাল উদ্দিন জানান, পৌর সদরের আফ্রাতপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মালিক হাসাদুল ইসলাম হীরার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে গতকাল রাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় চারটি ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপিনেতা হাসাদুল ইসলাম হীরাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত  পরিচয় আরও ৯০ বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেছে।  

আটঘরিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে পৌর সদরের কড়ইতলা মোড়ে দলীয় অফিসে বসে খেলা দেখছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় হঠাৎ করে অফিসের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম মুকুল বাদী হয়ে আজ দুপুরে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিএনপির ১০ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।  

সুজানগর থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ও শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চলছে কয়েকদিন ধরে। পৌর সদরের ভবানীপুর মোড়ে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিল। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।  

সাঁথিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামে গতকাল রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বৈঠক করার সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগনেতা মনছুর আলী বাদী হয়ে বিএনপির ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।  

আতাইকুলা থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে আতাইকুলায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। মামলার প্রস্তুতি চলছে।  

এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাবনা শহরের খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় দুটি ককটেল জব্দ করে পুলিশ।  

এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, এসব ঘটনা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করার ষড়যন্ত্রের অংশ। আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নিতে না পারে, সেজন্যই এসব নাটক সাজানো হয়েছে আর নাশকতার মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও মনে করি বিএনপির গণসমাবেশ সফল হবে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আর দমানো যাবে না।  

বিএনপির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, নিজেদের বাঁচাতে বিএনপি আবোল-তাবোল কথা বলছে। তারা নিজেরাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। তারা দেশব্যাপী আবারও নাশকতার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। কোনো কুল-কিনারা না পেয়ে আওয়ামী লীগের ওপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ঘটনা যা ঘটছে, তার আলোকে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, মামলা নিচ্ছে। এখন এটা নিয়ে কে কী বলছে, তা দেখার বিষয় নয়। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা আর নিরাপত্তায় তাদের দায়িত্ব পালন করছে। সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।