কক্সবাজার সৈকতে ডিম পাড়তে এসে মারা পড়ল বিশাল আকৃতির কচ্ছপ

Looks like you've blocked notifications!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা মৃত কচ্ছপটি পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা। ছবি : এনটিভি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে এসে মারা পড়েছে এক বিশাল আকৃতির কচ্ছপ। সেই কচ্ছপের ময়না তদন্ত করলেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটে (বোরি) কর্মরত বিজ্ঞানীরা। তারা ওই কচ্ছপের পেট থেকে বের করলেন একে একে একশত নয়টি ডিম। তবে সেই ডিম পেটেই নষ্ট হয়ে গেছে।

বেঁচে থাকলে সেই কচ্ছপটি কমপক্ষে ১৬০ টি ডিম পাড়তো এবং তা থেকে তিন মাস পর কচ্ছপের বাচ্চা ফুটলে সেগুলোকে সাগরে অবমুক্ত করা যেত। মৃত কচ্ছপের ময়নাতদন্ত শেষে এই তথ্য জানায় বোরিতে কর্মরত গবেষকরা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানিয়েছেন, বুধবার রাতে একটি মৃত সামুদ্রিক মা কচ্ছপ সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম ইকবাল সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের বিজ্ঞানীদের খবর দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল গবেষক মৃত কচ্ছপটি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে আসে। বেলাল হায়দর জানান, পরে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গবেষণা টিম মৃত কচ্ছপটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গবেষকরা মৃত কচ্ছপের পেট ও শরীরের অন্যান্য অংশ কেটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

ময়নাতদন্তের সময় দেখা যায় গবেষকরা মৃত কচ্ছপের পেট কেটে এর থলে থেকে একে একে ১০৯টি ডিম বের করে নিয়ে আসছেন। ময়নাতদন্তের পর ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, প্রজনন মৌসুম হিসেবে মা কচ্ছপটি ডিম পাড়তে সমুদ্র উপকূলে আসতে চেয়েছিল। এ সময় সাগরে কোনো জলযান বা জেলেদের জালে আটকা পড়ে কচ্ছপটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কচ্ছপের পেছনের একটি পা, পেট এবং মুখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বেশি। এরপরও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কচ্ছপটি উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়িতে আসতে চাইছিল। কারণ সমুদ্র সৈকতের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বালিয়াড়িতে গর্ত খুঁড়ে কচ্ছপ ডিম পেড়ে আবারও সাগরে পাড়ি দেয়। গুরুতর আহত এই কচ্ছপটি উপকূলে পৌঁছার আগেই মারা যায়। পরে কচ্ছপটি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে এবং আঘাতে পেটের ভেতর ডিম গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এসময় বেশ কিছু ডিম পেট থেকে বেরিয়ে পড়ে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা মৃত কচ্ছপের পেট কেটে বের করে আনা ডিম। ছবি : এনটিভি

তরিকুল ইসলাম বলেন ‘সমুদ্র উপকূলে ডিম পাড়তে এসে প্রায় সময় সামুদ্রিক কচ্ছপ জেলেদের জালে আটকে পড়ে মারা পড়ছে। অনেক সময় জেলেরা জালে আটকে পড়া কচ্ছপকে কাঠের গুড়ি দিয়ে আঘাত করে।’ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম আরও জানান, এই কচ্ছপটি ওলিভ রিডলি বা জলপাই রং প্রজাতির। এই প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ বঙ্গোপসাগরের এই অঞ্চলে বেশি বিচরণ করতে দেখা যায়।

প্রায় ৩০ কেজি ওজনের এই মা কচ্ছপটির দৈর্ঘ্য ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি ও প্রস্ত ২ ফুট ৩ ইঞ্চি। এর বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। কচ্ছপটির পেট কেটে ১০৯টি ডিম পাওয়া যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এই বয়স ও ওজনের একটি কচ্ছপ কমপক্ষে ১৬০টি ডিম দিয়ে থাকে। ময়নাতদন্ত শেষে কচ্ছপটির দেহ ও ডিম গবেষণার জন্যে ইনস্টিটিউটের ল্যাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বোরির মহা পরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, সাগরে বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে কচ্ছপ অন্যতম। সাগরের তলদেশের ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত কচ্ছপ সংরক্ষণ করা অবশ্যই সময়ের দাবি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার ইনানী সৈকতের শফিরবিল এলাকায় একটি ইরাবতী প্রজাতির মৃত ডলফিন ও কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত তিন মাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে অন্তত ৩০টি সামুদ্রিক কচ্ছপ মারা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।