কবরস্থানে আসামিকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, এএসআই প্রত্যাহার

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার ভাঙ্গুড়া থানার এএসআই জাহিদ হাসান। ছবি : সংগৃহীত

পাবনায় আসামিকে কবরস্থানে আটকে রেখে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ভাঙ্গুড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদকে পাবনা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

আজ বুধবার বিকেলে পাবনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তদন্ত শেষে জাহিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ জানায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় আলহাজ্ব জামাত আলী নামের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে কবরস্থানে আটকে রেখে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ ওঠে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা ও পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও মেয়েকে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী আসমা খাতুন। এর আগে রোববার মধ্যরাতে পারভাঙ্গুড়ার কবরস্থানে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন- ভাঙ্গুড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হাসান ও ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম। এ ছাড়া ভুক্তোভোগী জামাত আলী ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার সরদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত এক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিলেন জামাত আলী। এর জেরে রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে জামাত আলীর বাড়িতে এএসআই জাহিদ ও কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম যান। পরে আসামিকে নিয়ে তারা নির্জন স্থানে যেতে চান। এ সময় আসামির স্ত্রী ও মেয়ে বাধা দিলে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। পরে জামাত আলীকে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান। উপজেলা শহর ঘুরিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পারভাঙ্গুড়া কবরস্থানের সামনে নির্জন স্থানে আটকে রেখে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অবশেষে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা স্বীকার করলে কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম জামাত আলীর বাড়ি গিয়ে নগদ ৬০ হাজার ও ৯০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে আসেন। পরে রাত ১টার দিকে জামাত আলীকে বাড়ি পৌঁছে দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলর। পরদিন পৌরশহরের শরৎনগর বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ওই চেকের টাকা উত্তোলন করে নেয় তুহিন নামে এক ব্যক্তি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জামাত আলী আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, মেয়ে রিয়া আক্তার মিম অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবা ওয়ারেন্টের আসামি কি না তা আমরা বা বাবা জানতেন না। মধ্যরাতে কাউন্সিলর জহুরুল ও পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ কোনো কাগজ না দেখিয়ে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দিলে পুলিশ আমার হাতেও হাতকড়া পড়ায়। পরে আমার ও মায়ের সঙ্গে পুলিশ ও কাউন্সিলর নোংরা আচরণ করেন। আমাদের শরীরেও হাত দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। আমার বাবা পড়াশোনা না জানায় বাড়ির ফোন নাম্বার বলতে পারেনি। পরে কাউন্সিলর জহুরুল বাড়িতে এসে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর বাবাকে বাড়িতে রেখে যান।’

তবে, বিষয়টি অস্বীকার করে সহকারী উপপরিদর্শক জাহিদ হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জামাত আলী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তাই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় তাঁকে আটক না করে জামিন নেওয়ার জন্য সময় দিতে একটু দূরে নিয়ে কথা বলা হয়েছে মাত্র। টাকা পয়সা নেওয়া এবং স্ত্রী কন্যাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

এ বিষয় জানতে কাউন্সিলর জহুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। একজন ব্যক্তির অপকর্মের দায় পুরো বিভাগ নেবে না। তাই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুন্সী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। বিষয়টি অ্যাডিশনাল এসপির থেকে জেনেছি। তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য পুলিশ লাইনে তাঁকে প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীকাল অথবা পরশুর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’