করোনাকালীন অনুদানের কথা বলে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৩

করোনাকালীন অনুদান এবং উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি চক্র। তাদের দীর্ঘদিন অনুসরণ করে এরই মধ্যে একটি চক্রের মূলহোতাসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানিয়েছে, প্রতারণার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের মূলহোতা মো. আশিকুর রহমানকে (২৫) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের অপর দুই সদস্য মো. সাইফুল সর্দার (৩০) ও মোক্তার হোসেনকে (৩৪) ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
মুক্তা ধর বলেন, ‘সম্প্রতি উপবৃত্তি দেওয়ার নামে কয়েকটি প্রতারক চক্রের প্রতারণাকাণ্ডে অত্যন্ত উৎকণ্ঠায় রয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। প্রতারকেরা এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর দিয়ে ভুক্তভোগীদের ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। কোনো সরলমনা শিক্ষার্থী বা অভিভাবক যদি তাদের ফাঁদে পা দেয়, তাকে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হতে হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা আইনে মামলা রুজু হয়।’
এসএসপি মুক্তা ধর আরও বলেন, ‘উপবৃত্তি প্রদানের নামে অভিনব কায়দায় প্রতারণার বিষয়টি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়।’
এসএসপি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, প্রায় দুই থেকে তিন বছর ধরে উপবৃত্তির নামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরে মেসেজ দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন তাঁরা। প্রথমে শিক্ষাবোর্ডের নামে মোবাইল নম্বরে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে চক্রের সদস্যের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হলেও করোনাকালে উপবৃত্তির টাকা প্রদান বন্ধ রাখা হয়। তারা এই বন্ধের সুযোগ নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হচ্ছে মর্মে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। অথচ পঞ্চম, অষ্টম এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বৃত্তির তালিকা প্রণয়ন করা হয় এবং ওই টাকা এজি অফিস থেকে দেওয়া হয়। চক্রটি সাধারণত তিন থেকে চার সদস্যের হয়ে থাকে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম সদস্য বিকাশ/নগদ/রকেটের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে দোকানে অবস্থান নেয়। কৌশলে বিকাশ গ্রাহকের লেনদেনের খাতার ছবি তুলে নেয় তারা। এরপর ওই ছবি ইমো/মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয় সদস্যের কাজ হচ্ছে পিনকোড সংগ্রহ করা। সে ভিক্টিমকে কল করে কথাবার্তার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। এক পর্যায়ে উপবৃত্তির যে পরিমাণ টাকা প্রদান করা হবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়, তার সঙ্গে পিনকোডটি যোগ/বিয়োগ করে চক্রের প্রথম সদস্যকে বলতে বলা হয়। ভিক্টিম ফাঁদে পড়ে পিন কোডটি যোগ/বিয়োগ করে চক্রটিকে তথ্য দেয়।
তৃতীয় সদস্য তখন পিনকোডটি অসংখ্য বিকাশ/নগদ/রকেট অ্যাপ সম্বলিত অপর একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপে লগ-ইন করলে ভেরিফিকেশন কোড যায় ভিক্টিমের নম্বরে। তখন দ্বিতীয় সদস্য ওই ভেরিফিকেশন কোডটি ভিক্টিমের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। যখনই ভিক্টিমের নম্বরে কোথাও থেকে ক্যাশইন হয়, তাৎক্ষণিকভাবে দলের তৃতীয় সদস্য ওই টাকা তাদের দলনেতার কাছে থাকা বিকাশ/নগদ/রকেট-এ রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে দলনেতা প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত টাকাগুলো বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত তাদের পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে পুনরায় বিভিন্ন নম্বর থেকে আবার দলনেতার নম্বরে নিয়ে আসে। পরে দলনেতা ওই টাকাগুলো ক্যাশআউট করে প্রত্যেক সদস্যকে বিভিন্ন হারে বন্টন করে দেয়। মূলত, দলনেতাই ভুয়া এনআইডিতে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ডগুলো সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করে থাকে।