করোনার উচ্চ ঝুঁকিতেও শোডাউন আ. লীগনেতার
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে করোনা পরিস্থিতির চলমান উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকির মাঝেও বিশাল শোডাউন ও গণসমাবেশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বোয়ালমারীর কাদিরদি কলেজ সংলগ্ন ময়দানে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।
ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত আয়েশা শরিয়ত উল্যা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের পাঁচতলাবিশিষ্ট একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ও অন্যান্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আজ বিকেলে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বোয়ালমারী ছাড়াও আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী থেকে মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক যোগ দেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে শহরে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দের নাম ঘোষণা করা হলেও তারা উপস্থিত হননি।
উপস্থিত ছিলেন বোয়ালমারী পৌর মেয়র সেলিমুজ্জামান লিপন মিয়া, আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিকুল মৃধা, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান অতিথির পেছনে তিনজন ব্যক্তির দুজনেরই মাস্ক ছিল না।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি যখন এই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলাম তখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ভবন করেছি। মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক, কালুখালি-ভাটিয়াপাড়া রেললাইন আমার সময়েই করেছি। তবে আজ অনেক কথাই শুনতে পাই।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই লকডাউন বোয়ালমারী পৌরসভায় দেওয়া হয়েছে, এখানে নয়। তারপরও এই বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন কইরেন না।’
এদিকে, করোনার এই উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে এভাবে গণজমায়েত করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ। তিনি বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তিনি ধরেননি। এভাবে এই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে গণজমায়েত করা ঠিক হয়নি।’
শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারেননি জানিয়ে ঝোটন চন্দ বলেন, ‘আমার প্রতিনিধি হিসেবে এসিল্যান্ডকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তবে দুপুর ৩টার দিকে জনসমাগম বাড়তে থাকায় তিনি সেখান থেকে চলে আসেন।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমি দাওয়াত পেয়েছিলাম, তবে যাইনি। এটি একটি রাজনৈতিক প্রোগাম। এটাও একটা কারণ। তবে আমার প্রতিনিধি ছিলেন সেখানে। আর করোনার সময়ে এমন প্রোগাম, এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এটি কতটুকু যৌক্তিক, তা বিবেচনার ভার ওই নেতার ওপরেই ছেড়ে দিলাম। রাষ্ট্রের আইন মানার দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য।’
ফরিদপুরে করোনার কারণে বোয়ালমারী পৌরসভাসহ ফরিদপুর পৌরসভা, মধুখালী পৌরসভা ও ভাঙ্গা পৌর এলাকায় গত ২১ জুন থেকে কড়াকড়ি লকডাউন চলছে। এই লকডাউনে কাঁচাবাজার, মাছবাজার ও চালের আড়তও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাসপাতালের নিকটতম ওষুধের দোকানগুলো ছাড়া অন্য স্থানের ওষুধের দোকান ও মুদি দোকানও বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৪ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্রমবর্ধিষ্ণু এই প্রবণতার রাশ টেনে না ধরলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।