কর্মবিরতিতে সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের শ্রমিকরা

Looks like you've blocked notifications!
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্যগুদামের শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে খাদ্যপণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক। ছবি : এনটিভি

‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর উপায় নেই, বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলতে থাকবে।’ আক্ষেপ করে বলছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের শ্রমিক আকছাদ আলী। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে এখানে কাজ করছেন তিনি।

আকছাদ আলী বলেন, ঝড় বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম দিচ্ছি। তার পরও আমরা নায্য মজুরি পাচ্ছি না।

জাতীয় শ্রমিক লীগ সরকারি খাদ্য গুদাম শাখার সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সংসার চালাতে পারছি না। আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শুনছে না। এখানকার ৪১ জন শ্রমিক চরম সংকটে পড়েছেন। সংকটের কারণে তাদের সংসার চলানোই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখানে কাজ করে সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই, এটা দিয়ে কি সংসার চলে—এমন প্রশ্ন রেখে আনোয়ার হোসেন বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই হিসাবে আমাদের শ্রমের মূল্য বাড়েনি।

আব্দুল হামিদ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমাদের গাড়ি বাড়ি ধন দৌলতের দরকার নেই, আমরা যাতে ভালোভাবে ডালভাত খেয়ে বাঁচতে পারি—এটাই চাই। কিন্তু যেভাবে আমরা চলছি, এখন আর ডালভাতও হচ্ছে না। সন্তানদের পড়াশোনাও করাতে পারছি না।

আব্দুল হামিদ বলেন, আমি স্বাধীনের পর ঢুকছি এই গুদামে, তখন ১০ পয়সা ছিল টনপ্রতি শ্রমিকের পাওনা। এখন ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা দিয়েও সংসার চালানো যাচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানাই, যেন আমাদের মতো অসহায় এই শ্রমিকদের দিকে নজর দেন। সমস্যা সমাধান করে দেন।

আকছাদ, আনোয়ার কিংবা হামিদই শুধু নন কষ্টের যেন শেষ নেই সৈয়দপুর খাদ্য গুদামের ৪১ শ্রমিকের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন এখানকার শ্রমিকরা। ফলে সব ধরনের খাদ্যপণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে গুদামে। খাদ্যপণ্য নিয়ে আসা পাঁচটি ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে খাদ্য গুদামে।

ট্রাকে চাল নিয়ে আসা চালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, নীলফামারী থেকে শনিবার ট্রাক ভর্তি চাল নিয়ে এসেছি এখানে। সেদিন থেকে ট্রাকের মাল খালাস করা হয়নি। কোনো শ্রমিক কাজ করছে না। আমিও বেকায়দায় পড়েছি। আমার মতো আরও চারজন একই অবস্থায় পড়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাড়ে ৩৭ টাকা টন হারে মজুরি দেওয়া হয় শ্রমিকদের। সেটাও আবার তিন চার মাস পর পেয়ে থাকেন তারা।

এই টাকা থেকে শতকরা ২৫ ভাগ ভ্যাট এবং শতকরা ৩ ভাগ অফিস খরচ কর্তন করে নেওয়া হয়। হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার না থাকায় দেড় বছর ধরে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এভাবে টাকা পরিশোধ করছেন শ্রমিকদের মধ্যে।

খাদ্যগুদাম শ্রমিক লীগের সভাপতি জিকরুল হক বলেন, বর্তমানে টনপ্রতি সাড়ে ৩৭ টাকা ২০১৪ সালের আগে নির্ধারণ করা। ২০১৪ সালের পর নতুন করে দরপত্র বা মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। দুই বছর অন্তর অন্তর হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে থাকে। ঠিকাদারের মাধ্যম আমাদের টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু দরপত্র হলে তিন-চার মেয়াদে দুই টাকা করে বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়ত কিন্তু এখন আগেরটাই বহাল রয়েছে।

জিকরুল হক আরও বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে এর আগেও আমরা কয়েক বার আন্দোলন করেছি কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এবং আশ্বাসে আমরা তা প্রত্যাহার করে নেই। কিন্তু আর কোনো উপায় নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীমা নাসরিন শিমু বলেন, হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার না থাকায় দেড় বছর থেকে মাস্টাররোলে অফিস থেকে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।  গেল কয়েক দিন ধরে তাদের আন্দোলনে গুদামের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন। আলোচনাও করছেন। হয়তো সমাধান হয়ে যাবে। হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে, সেটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টিতে আমাদের কোনো হাত নেই। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সামনে দরপত্র হবে। স্বাভাবিকভাবে দরও বাড়তে পারে। সারা দেশে এক রেটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এখানে ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন শ্রমিকরা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, দীর্ঘদিন দরে শ্রমিকরা কাজ করছেন সেখানে। তাদের দাবিও যৌক্তিক। মজুরি বাড়ানো দরকার, তবে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করাটাও অযৌক্তিক। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। হয়তো দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। শ্রমিকরা দাবি-দাওয়া তুলে কর্মবিরতি পালন করছেন। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।