কারওয়ান বাজারে ‘ধাক্কা পার্টি’র দৌরাত্ম্য
নাজমুল ইসলাম, বেসরকারী চাকরিজীবী। তিনি মুফোঠোনে কথা বলতে বলতে কারওয়ান বাজার মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁকে পেছন থেকে এক যুবক জোরে ধাক্কা দেন। ফোনটি হাত থেকে পড়ে যায় নাজমুলের। ফোনটি তোলার আগেই নাজমুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন ওই যুবক। বলতে থাকেন, ‘ধাক্কা দিলি ক্যান?’
একপর্যায়ে, বাকবিতণ্ডায় যোগ দেন আরও তিনজন। তিনজনই ওই ধাক্কা দেওয়া ব্যক্তির সঙ্গী। সে সময় মুঠোফোনটি নিচ থেকে তুলতে যান নাজমুল। কিন্তু, তার আগেই ওই চার ব্যক্তির একজন ফোনটি তুলে নেন। এরপর ফোনটি চান নামজুল। তখন নাজমুলকে তাদের একজন বলেন, ‘এ ফোন আমার’। এ কথা বলার পরই নামজুলকে চড় মারে তাদের একজন।
চড় মারার পর নাজমুলকে বলা হয়, বেশি কথা বললে চোর বলে ধরিয়ে দেওয়া হবে। পরে একজন বাকবিতণ্ডা করতে থাকেন, আর বাকি তিনজন সটকে পড়েন। পরেরজনও একটু বাদেই দৌঁড় দেন। এ সময় নাজমুল চিৎকার করেন, তখন কেউ আশপাশে ছিল না।
গতকাল রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নাজমুলের সঙ্গে ঘটে এই ঘটনা। তবে, শুধু নাজমুল নন, কারওয়ান বাজার এলাকায় মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যাচ্ছে প্রায়ই। আর সেটি শুরু হচ্ছে ধাক্কা দিয়ে।
নাজমুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে, তার মানে অন্যদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে। ধাক্কা দিল ওরা, দোষ দিল আমাকে। ফাঁদে ফেলে আমার ফোন নিয়ে গেল। ওরা যখন আমার ফোন নিয়ে চলে যাবে, তার আগেই আমাকে হুমকি দিয়ে রেখেছে। বলেছে, আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে আমার আরও ক্ষতি করবে। ওরা আমাকে এ পথ দিয়ে প্রায় যেতে দেখে, সে কথাও বলেছে। এখন আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমার ২০ হাজার টাকার ফোন গেছে, যাক। আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করব না।’
ওমর ফারুক। কাজ করেন এনটিভি অনলাইনে। তিনি যাচ্ছিলেন রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে। হঠাৎ তাঁর বুক বরাবর ধাক্কা দেন এক যুবক। ধাক্কার কারণ জানতে চাইলে ওমর ফারুকের সঙ্গে অযাচিত শব্দ উচ্চারণ করেন। গালি দেন। এরপর আরও দু-তিনজন ব্যক্তি জড়ো হন। তারাও ফারুকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন।
ওমর ফারুক বলেন, ‘গত ২৩ জানুয়ারি আমি এনটিভি অনলাইন থেকে রাত ৮টা ১০ মিনিটে বের হই। বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন স্বেচ্ছায় আমার বুকের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। আমি জানতে চাই, কী সমস্যা? ওই যুবক ‘দেখিনি’ বলে আমাকে সরি বলেন। এরপর এক ব্যক্তি আমাকে অযাচিতভাবে গালি দেন। থাপ্পড়ও মারেন। আমার পকেটে হাত দেন। আমাকে নিয়ে টানাহেচড়া শুরু করেন। আমাকে নার্ভাস করার চেষ্টা করেন। ওরা আমার নাকে-মুখে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমার মনে হচ্ছিল, আমাকে অজ্ঞান করে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।’
ওমর ফারুক আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে, আমার কাছে জানতে চান, আমি কোথায় চাকরি করি। বলি এনটিভিতে। তারপর তারা আমার কার্ডটি দেখার চেষ্টা করেন, দেখেনও। কার্ডটি দেখার পর তারা নরম হয়। সে সময় পাশ দিয়ে একজন পথচারী যাচ্ছিলেন। আমি তাকে ডেকে আমার দিকে আসতে বলি। তারপর আমি দ্রুত সেখান থেকে চলে আসি।’ তিনি বলেন, ‘অফিসের কার্ডটি দেখার পর তারা আমাকে চলে যাওয়ার পথ বের করে দিয়েছে বলে মনে হয়।’
ফারুক বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমারই এক সহকর্মীর ফোন ছিনতাই হয়েছে। তারও কিছুদিন আগে আরেক সহকর্মীকে অজ্ঞান করে একটি ঘরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। ছিনতাইকারীরা খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে কারওয়ান বাজারে।’
এদিকে, হুমায়ূন চৌধুরীরের সঙ্গেও ঘটেছে এমন ঘটনা। তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে কারওয়ান বাজারের বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘পেছন থেকে একজন একজন আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি পড়ে যাওয়ার মতো হলাম। পরে হেঁচকা টান দিয়ে আমার ফোন নিয়ে চলে গেল। আমিও দৌঁড় দিলাম। কিন্তু, ধরতে পারিনি।’
গত মঙ্গলবার শরিফুল হাসান নামের এক যুবকের মুঠোফোন নিয়ে দৌঁড় দেয় এক ছিনতাইকারী। শরিফুল বলেন, ‘ফোন নিয়ে দৌঁড় দিল এক ছিনতাইকারী। বাসগুলোর মধ্য দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল, আর খুঁজেই পেলাম না।’
আরেকজনের নাম শহিদুল। তিনিও ধাক্কার পর ছিনতাইয়ের শিকার। শহিদুলের দাবি, ‘পুলিশের আশপাশ দিয়ে ছিনতাইকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু বলছে না।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের উচিত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রায় বলা হয়, রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। রাজধানীর মিরপুর-১-এর গোলচত্বর, ফার্মগেট, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিয়মিত ছিনতাইয়ের শিকার হন সাধারণ মানুষ।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সোমবার রাত ৮টার সময় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন বোরাক টাওয়ারের ওখানে আমাদের একটি টহল টিম রয়েছে। কারওয়ান বাজারের আশপাশে সব সময় আমাদের টহল টিম থাকে। দেখা গেল, টহল টিম একপাশে রয়েছে; অন্যপাশে ছিনতাইকারীরা সক্রিয়। তবে, ইদানিং প্রায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাই আমরা। থানায় এসেই অভিযোগ দেয় অনেকে। আমরা অভিযান জোরদারের চেষ্টা করাছি।’