কুমিল্লার লালমাইয়ের হাজীপুরে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঝুঁকি

Looks like you've blocked notifications!
কুমিল্লা জেলার লালমাইয়ের হাজীপুর গ্রামে আর্সেনিক পরীক্ষার পর নলকূপ চিহ্নিত করা হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

কুমিল্লা জেলার লালমাইয়ের হাজীপুর গ্রাম এখন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের ঝুঁকিতে পড়েছে। বাকই উত্তর ইউনিয়নের এই গ্রামের ৮৫ শতাংশ নলকূপের পানিতে পাওয়া গেছে এর উপস্থিতি। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের আওতায় এই পরীক্ষা চালানো হয়।

গ্রামবাসী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজীপুর গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের খাওয়ার পানির চাহিদা মিটাতে রয়েছে প্রায় ২৫০টি অগভীর নলকূপ। এর মধ্যে ১৯২টি নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হয়। যেখানে দেখা যায়, ১৬৪টি নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এবং গত শুক্র ও শনিবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নিয়োজিত পরীক্ষক রাসেল, তানভীর, সজিব ও ফাতেমা ওই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করেন।

পরীক্ষার ফলাফল বলছে, পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ পিপিবি হলেও হাজীপুর গ্রামের ১৭টি নলকূপের পানিতে ১০০০ পিপিবি, ৫২টি নলকূপের পানিতে ৫০০ পিপিবি, ৪২টি নলকূপের পানিতে ৩০০ পিপিবি, ১৮টি নলকূপের পানিতে ২০০ পিপিবি ও ৩৫টি নলকূপের পানিতে ১০০ পিপিবি মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে। 

টেস্টার রাসেল আহমেদ ও তানভীর জানান, হাজীপুরের ৮৫ভাগ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দেওয়া নলকূপের পানিতেও আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। যেসব নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে, সেসব নলকূপের মুখে লাল রং করে দেওয়া হয়েছে।

বাকই উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তিন বছর আগেও একটি সংস্থা পরীক্ষা করে আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে বলে জানিয়েছিল। আমার নলকূপের পানিতেও ১০০ পিপিবি মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে।’ 

এক হাজার পিপিবি মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া নলকূপের মালিক আবুল কাশেম ও আবুল হাসেম বলেন, ‘জেনেশুনেই আর্সেনিকের মতো বিষ নিয়মিত পান করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব, আমাদেরকে গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকারসহ বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

লালমাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লালমাইয়ের সব কয়টি গ্রামে একযোগে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা কার্যক্রমটি সম্পন্ন করতে তিনজন ম্যাকানিক ও ৫২ জন টেস্টার কাজ করছে। ২১ জুন দুপুর পর্যন্ত ওই উপজেলার ছয় হাজার ৯৮০টি নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৪টি নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।’

সাইফুল আরও বলেন, ‘বাকই উত্তরের হাজীপুর গ্রামের ৮৫ ভাগ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। যতদূর জেনেছি, ওই গ্রামের নলকূপগুলো ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পে হাজীপুর গ্রামকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’ 

লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রওনাক জাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন স্যারকে অবহিত করেছি। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছি। হাজীপুরবাসীকে বলব, দয়া করে লাল চিহ্নিত নলকূপের পানি পান করবেন না।’ 

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উল্যাহ বলেন, ‘চলমান জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে যে গ্রামে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি দেখা যাবে, সে গ্রামে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে।’