কুড়িগ্রামে পানির নিচে ১১ হাজার হেক্টর ফসল

Looks like you've blocked notifications!
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকারচর থেকে তোলা। ছবি : ইউএনিবি

নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আজ সোমবার সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক চরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইনশৃঙ্খলা সঙ্গে জড়িত কর্মকতা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আরও পাঁচটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটিও।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ছয় হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষেত রয়েছে।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য মিলছে না। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজার যাতায়াতসহ যোগাযোগের চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।

উলিপুর উপজেলার মশালের চরের বাসিন্দা মুসা মিয়া জানান, এই চরের ২০০টি পরিবারের সবার বাড়িতেই পানি উঠেছে। সবগুলো সড়ক ও ফসলের ক্ষেত এখন পানির নিচে।

জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস চাষির ১১৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মুরগি মারা গেছে। এ ছাড়াও গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শষ্য তলিয়ে যাওয়ায় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল বলেছেন, এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সবকটিই এখন বন্যাকবলিত। পানিবন্দি রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ রৌমারী-ইজলামারী সড়ক নিমজ্জিত থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রৌমারী শুল্ক স্টেমন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, জেলার ৪৯টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৩১৩ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৪ লাখ টাকা, পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।